বিএনপি নিজেদের পরিণতি পাকিস্তান আমলের শুরুর দিকে প্রতাপশালী মুসলিম লীগের মতো করতে চাইলে তা ঠেকানোর কোনো উপায় দেখছেন না আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
নতুন পদ পাওয়ার পরদিন হেয়ার রোডে নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী। আগের দিন তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্য হন।
এ সময় মোশাররফ বলেন, তিনি কখনও পদের আশা করেননি, তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যে ভরসা করে তাকে নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন, তার প্রতিদান দেয়ার কথাও জানান তিনি।
বিএনপি যদি এবারও ভোট বর্জন করে তাহলে সরকার কী করবে-এমন প্রশ্নেরও জবাব দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্য। বলেন, ‘বিএনপি ৫০টা দলের মধ্যে একটা দল। এমন না যেন ব্রিটেনের মতো তিনটা দল। লেবার, ডেমোক্রেটিক আর রিপাবলিকান। বাংলাদেশে তো রাজনৈতিক দৈন্যতা নেই। দলের তো আমরা পাঁচজন মিলে একটা দল করে ফেলতে পারি। বাংলাদেশের জনগণের সেই যোগ্যতা আছে। ৫০ দলের মধ্যে একটা দল যদি না আসে তারা যদি সাইদা মুসলিম লীগ হতে চান, আমরা কীভাবে ঠেকাব? আমরা কি ঠেকাতে পারব?’
‘আমরা তাদের সেধে বলব যে, আমরা এখানে কনটেস্ট করব না, আপনারা আসুন?’
‘উনারা চান যে, উনাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হোক। রাজনীতিতে আমরা তো রাস্তায় ছিলাম। উনারা কি ভুলে গেছেন আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন তো পাড়ায় একটা মিছিলও করতে পারিনি? ’
২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার কথাও তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ। বলেন, ‘একুশে আগস্ট নেত্রীর উপর হামলা। আমরা মিটিং করতে পারি নাই। রাস্তায় বের হতে পারি নাই।’
‘এখন উনারা পারতেছেন না এটা উনাদের নিজেদের দুর্বলতার কারণে। আমরা যদি ওই পরিবেশ পরিস্থিতিতে জনমত সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণের ভোটে জিততে পারি তাহলে উনারা পারবেন না কেন?’
‘এখন (বিএনপি) নালিশ পার্টি হয়ে গেলে তো মুসিবত। আমরা যা করব, সেটাই উনাদের অসুবিধা। সুবিধা করে পৃথিবীর কোনো সরকার কি অপজিশনের হাতে ক্ষমতা তুলে দিছে? তাইলে উনারা এটা কীভাবে চান?’
‘আমাদের পক্ষ থেকে কিন্তু স্বাভাবিক আচরণই হচ্ছে। স্বাভাবিক যে বিরোধিতা সেটা তো শুধু বাঙালিরা করছে না। পৃথিবীর সব জায়গায়ই হয়। পক্ষ বিপক্ষ থাকে। পক্ষে কথা হয় বিপক্ষে কথা হয়। উনারা যা বলবেন আমরা কিছু বলব না ঘরে বসে থাকব? এটা কি সম্ভব হবে?’
‘বিএনপির দুর্বল হওয়া রাজনীতির জন্য ভালো লক্ষণ না’
ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে থেকে বিএনপি দুর্বল হয়ে গেছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। আর এটা রাজনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয় বলেও মনে করেন তিনি।
‘এখন আমার বলতে কোন দ্বিধা নাই, তারা শক্ত হওয়ার পরিবর্তে এখন ডিসইনটিগ্রিটেড হতে চলছে। যেটা ডেমোক্রেসির জন্য শুভ লক্ষণ নয়।’
নিজ এলাকা ফরিদপুরের বিএনপির ওপর কোনো ধরনের হামলা মামলা নেই জানিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে কোন রকম কিছু নেই। সবাই যার যার সাংগঠিনক এবং সাংবিধানিক দায়িত্বপালন করছে।’
সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘শক্ত অপজিশন না থাকলে কিন্তু ডেমোক্রেসি কার্যকর হয় না। ডেমোক্রেসি কার্যকর করতে হলে শক্ত বিরোধীপক্ষ দরকার। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম যে শক্ত বিরোধী পক্ষ হবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে প্রপার ইভালুয়েশন করতে পারবে।’
আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর ভরসা করে চলে জানিয়ে দলের উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যারা আওয়ামী লীগের থার্ড টাইমের জন্য চিন্তাভাবনা করছি আমরা কিন্তু জনগণের প্রতি আস্থা রেখেই করছি। এর মধ্যে অন্য কোন রকম কিছু নেই।’
গাজীপুরে কাকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছে?
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থকদের গণহারে গ্রেপ্তারের অভিযোগেরও জবাব দেন মোশাররফ। বলেন, ‘আপনারা কি কারও নাম বলতে পারবেন যে কোন অপরাধী নয়, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করেছে?’
‘গয়রোহ (গণহারে) বললে তো হবে না। খুনি, আসামিদের দিয়ে যদি নির্বাচন করায়, ভয়ভীতি দেখায়, তাহলে তো ভিন্ন কথা। সেখানে তো পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। এই সব কথা বলে তো পরিবেশ ঘোলা করে কোনো লাভ নাই।’
‘পদ-পদবি জরুরি নয়’
শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তাতে গর্ববোধ করছেন মোশাররফ। বলেন, ‘আমার উপর আস্থা রেখেছেন। আমিও আস্থার মর্যাদা রক্ষা করার চেষ্টা করব।’
‘জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে আমার জন্য পদ-পদবী খুব জরুরি এইটা আমার কাছে একবারের জন্যও মনে হয় নাই। মনে আসে নাই কারণ কালকে আমাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে আমাকে কেউ কিন্তু প্রশ্ন করে নাই যে আমি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলাম না। তোমরাও (সাংবাদিক) কর নাই। এই ধরনের কোনো ইস্যু ছিল না কোন সময়।’
‘এটা না থাকার কারণ হল আমাদের পর্যায়ের মানুষদের জন্য পদ-পদবীটা খুব জরুরি বলে মনে হয় না। ৮০ বছরে এসে যদি আমাদের পেছনে ছাপ্পা লাগে বা পদ-পদবি লাগে তাহলে তিনপুরুষ, চারপুরুষ ধইরা কি রাজনীতি করলাম? সমাজে কী সেবাটা দিলাম? জাতির পেছনে বা স্থানীয় জনগণের জন্য কী কাজটা করলাম?’
‘একটা পদ পাবো না ঘরে বসে থাকব- এ রকম কোন পরিবেশ পরিস্থিতি কি কখনও তোমরা দেখছো? আমার পদ নাই। এর জন্য কি কখনও আক্ষেপ তোমরা দেখছ? আজকে যে পদটা পাইছি তার জন্য এক্সটা কোন উচ্ছ্বাস দেখছ?’
‘মূল্যায়ন করার দরকার উনি (শেখ হাসিনা) করছেন। উনি আমাদের নেত্রী। উনার জন্য তো আর পাঁচশ/ এক হাজার সদস্যের কমিটির দরকার নাই। উনি ২০/৫০ জনের কমিটি নিয়ে বেশ ভাল সরকার চালাতে পারে। সেই নেতৃত্বের গুণাবলী উনার মধ্যে আছে।’
তবে অভিনন্দন জানানোয় আবেগাক্রান্ত হওয়ার কথা জানান মোশাররফ। বলেন, ‘আমি আসলেই খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনারা এসেছেন।’
নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন এলজিআরডি মন্ত্রী। বলেন, ‘আমি তো শুধু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি তা নয়। জাতিসংঘেও আমি কাজ করেছি। তখন ৩০/৪০ টা দেশে রুরাল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে তাদের এডভাইস করেছি। সেই সুবাদে বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিট করার মতো রাষ্ট্রনায়ক আমার চোখে পড়ে নাই।’
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন