বিএনপির বিষয়ে কৌশলী ভূমিকায় থাকবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে এলে এক ধরনের, না এলে অন্য ধরনের কৌশল অবলম্বন করবে ক্ষমতাসীন দল ও সরকার। নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্যে বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিলে তা কিভাবে প্রতিহত করা হবে সে নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে ক্ষমতাসীনরা। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, আন্দোলন করার মতো দলীয় শক্তি এখন বিএনপির নেই বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তাই কোনো প্রকার হঠকারিতায় না গিয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই আন্দোলন মোকাবেলা করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, বিএনপির আন্দোলন করার শক্তি থাকলে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারা ‘শোডাউন’ করতে পারত। কিন্তু বিএনপি তখন রাস্তায়ই নামতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই জাতীয় নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও শেষ পর্যন্ত তা কাজে আসবে না।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কোনো উদ্যোগ নেবেন না বলে এরই মধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মাসে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘জোর করে কাউকে ভোটে আনব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনটা হচ্ছে গণতন্ত্র। কোন পার্টি নির্বাচন করবে, কোন পার্টি নির্বাচন করবে না, এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। একজনের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর আমি তো আর চাপিয়ে দিতে পারি না, তোমাদের নির্বাচন করতেই হবে। তাহলে তো বলতে হবে, তোমাদের নির্বাচন করতেই হবে, না করলে ধরে নিয়ে যাব জেলে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশে কোনো আন্দোলন হবে না। জনগণ সাড়া দেবে না। আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপির দলীয় কোনো প্রস্তুতি নেই। তিনি বলেন, দেশে কোনো একতরফা নির্বাচন হবে না। অনেক বেশি দল নির্বাচনে আসবে। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপি না এলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে কেন? বিএনপি অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ হবে?
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে বাংলাদেশে কোনো আন্দোলন হলে তা সফল হবে বলে মনে করি না। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসন কোনো রাজনৈতিক কারণে জেলে যাননি। একটি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে গেছেন।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন মোকাবেলার কৌশল প্রণয়নের পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও পুরোদমে চলছে আওয়ামী লীগে। পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, দলীয় প্রার্থী বাছাই এবং নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি নির্মূলের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে থাকবে ইশতেহারে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও যমুনায় রেল সেতু নির্মাণ এবং বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রতিশ্রুতিও থাকবে আওয়ামী লীগের ওই ইশতেহারে। আগামী অক্টোবরের মধ্যেই ইশতেহার তৈরির কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক রাশিদুল আলম গত বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু করেছি। দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজ নিজ কাজ করছেন। প্রস্তুতিতে কোনো ধরনের ঘাটতি নেই।’
জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না এলে ১৪ দলই হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে জোট হবে না। জাপা মিত্রদের নিয়ে আলাদা জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেবে। আর বিএনপি নির্বাচনে এলে জাপাকে নিয়ে মহাজোট গঠন করবে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নির্বাচনে আসবে ধরে নিয়েই দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে একাধিক সংস্থা মাঠপর্যায়ে জরিপ পরিচালনা করছে। এ কাজের মধ্যেই শতাধিক প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট এক নেতা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন