গাজীপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘অনিয়ম’ করলে ওই চিত্র জনগণের সামনে হাজির করবে বিএনপি। দলটির নেতাদের অভিযোগ নৌকা প্রতীকে ভোটকেন্দ্র দখল করে সিল মারা, জালভোট দেওয়া, ধানের শীষের প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া ইত্যাদি অনিয়মের মধ্য দিয়ে খুলনা সিটি নির্বাচনে হয়েছে। একই রকম ঘটনা গাজীপুরেও হতে পারে বলে শঙ্কায় দলটি। গাজীপুরে এমন কিছু ঘটলে এর প্রমাণসহ জনগণের সামনে দৃশ্যমান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ জন্য প্রস্তুতি
নেওয়ার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
দলটির নেতারা বলেন, সঠিকভাবে গাজীপুরের ভোটের অনিয়ম দৃশ্যমান করতে পারলে জাতীয় নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আরও জোরালো করা সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি, দেশি-বিদেশিদের সামনে গাজীপুরে ভোটের অনিয়ম তুলে ধরে নিরপেক্ষ সরকার দাবির পক্ষে সবার সহযোগিতা চাওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী গাজীপুরের ৮০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। বিএনপি মনে করছে, এখানে যেহেতু সবকিছু পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করছে, সেহেতু ধানের শীষের ভোটারদের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এ অনুযায়ী সাহসী নেতাকর্মীদের পোলিং এজেন্ট ও তাদের সমন্বয়ে বিশেষ টিম করছে দলটি।
দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, ভোটের আগের রাতে থেকে ফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারা দেবেন ওইসব টিমের সদস্যরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর সমর্থক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পক্ষে কোনো ‘অনিয়ম’-এ জড়ালে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া ভোটের দিন সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রের বাইরে ব্যাপক জমায়েত করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানে গাজীপুরের ভোট নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা। জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার আমাদের সময়কে বলেন, গাজীপুরে অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে সরকার ভোট ডাকাতি করলে বিএনপি তা প্রতিরোধ করবে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, গাজীপুরে সরকারকে খুলনার মতো ভোট ডাকাতি করতে দেওয়া হবে না। সরকারি দলের সব ধরনের হুমকি-ধমকি মোকাবিলা করে ভোটের দিন সকাল থেকে ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাহারা দেবেন নেতাকর্মীরা। সরকার ভোট ডাকাতি করলে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রেজাল্ট নিয়ে বের হবেন নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার মতো গাজীপুরে অহিংস পদ্ধতিতে কেন্দ্রের ভেতরে ভোট ডাকাতির খবর পেলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীর সামনে ভোটের বাস্তবচিত্র জানানো হবে। এর বাইরেও ভোট চুরি ঠেকাতে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতিই নেওয়ার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাসিক নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ফজলুল হক মিলন বলেন, খুলনায় আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে ভোট ডাকাতি করেছে। কিন্তু গাজীপুরে সেটি করতে চাইলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ করব। আমরা তো নিরস্ত্র। সশস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণই হচ্ছে মূল অস্ত্র। সেটিকে আমরা কাজে লাগাব। সাহসী নেতাকর্মীদেরই আমরা পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজে লাগাব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন