আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গন অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলে চাপা কোন্দলের কারণেই এই আশঙ্কা ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যেও চলছে দ্বন্দ্ব। একই সঙ্গে নির্বাচনী মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা চলছে নীরবে নিভৃতে।
খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী কয়েকবার নির্বাচিত এমপি বর্তমানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (এমপি)। তবে এবার এই আসন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করতে চাইছেন এক তরুণ নেতা। নেপথ্যে থেকে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে- এবার যে কোনো ওপায়ে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তিনি বাগিয়ে নেবেন। আর তাতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ডুমুরিয়া-ফুলতলার নির্বাচনী মাঠ।
খুলনা-৫ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত এমপি, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী সালাউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন এবং ১০ম জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভিন্ন কারণে বর্তমানে তিনি মাঠ পর্যায়ে ইমেজ সংকটে ভুগছেন বলে দলের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন। তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় মনোনয়ন তার বাইরে কোনোভাবেই যাবে না এমনই মনে করেন তার অনুসারীরা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (এমপি) মনোনয়ন প্রাপ্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, জনগণ আমাকে বার বার নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছেন। এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং গণমানুষের ভালোবাসায় আবারো আমি মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আমার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার জনপ্রিয়তা অনেকেই সহ্য করতে পারছেন না। ফলে তারা বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক বিষয়।
দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে জোরালো প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন খুলনা জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি ড. এম মাহাবুব উল ইসলাম। ইতিমধ্যে তিনি সুখ-দুঃখের সঙ্গী ও গরিবের বন্ধু হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। গণসংযোগকালে তিনি শ্রমিক, দিনমজুর ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সুখ-দুঃখের কথা শুনছেন। ড. মাহাবুব উল ইসলাম প্রচার প্রচারণায় সব চেয়ে শীর্ষে রয়েছেন বলে জানান মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
সূত্রানুযায়ী, বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে বিগত নির্বাচনের মতো এবারো এ আসনে সাবেক এমপি জামায়াত ইসলামীর নেতা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০১ সালে তিনি বর্তমান এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারো তিনি মনোনয়নের জোরালো দাবিদার। আর তাতেই মাথা খারাপ হওয়ার দশা হয়েছে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। তারা এবার কোনোভাবেই জামায়াতকে ছাড় না দেয়ার মনোভাব দেখিয়ে চলেছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে মনোনয়ন চাইবেন খুলনা জেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. গাজী আব্দুল হক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নেতা ড. মামুন রহমান, ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খান আলী মুনসুর।
আগামী নির্বাচনে মনোয়ন প্রত্যাশী খুলনা জেলা বিএনপির সহসভাপতি, সাবেক এমপি অধ্যাপক ডা. গাজী আব্দুল হক বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সৃষ্টি করতে হবে। যাতে মানুষ আস্থা ফিরে পায়। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে নির্বাচন কমিশনকে জনগণের এমন আস্থা ফেরাতে হবে।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন