তিন সিটির নির্বাচন নিয়ে জোট শরিক বিএনপির সঙ্গে টানাপড়েন চলছে জামায়াতের। জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেটে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে জোটের মধ্যে চলছে অস্থিরতা। জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের অভিযোগ তুলছে বিএনপিসহ শরিকরা। ঠিক এ সময়ে মুক্তি পেল যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ। পুরো বিষয়টিতে ‘রহস্য’ দেখছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিএনপি নেতারা বলছেন, জামায়াতে ইসলামীর আমিরসহ সিনিয়র নেতাদের মুক্তি এবং সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া একই সূত্রে গাঁথা। সরকারের সঙ্গে জামায়াতের গোপন আঁতাতের যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, এর মাধ্যমেতা পরিষ্কার হলো। জোটের ভোটে ভাঙন ধরাতে সরকারের ‘ইন্ধনে’ জামায়াত সিলেটে নির্বাচনের মাঠে রয়েছে।
এ বাস্তবতায় গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করেন। এতে শিগগিরই ২০-দলীয় জোটের বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। জামায়াতের কাছে সিলেটে প্রার্থী রাখার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আমাদের সময়ের প্রশ্নের সম্মুখীন হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে তিনি কোনো উত্তর দেননি। বললেন, সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ের বাইরে কোনো কথা বলবেন না।
দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় জামায়াত আমাদের মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু আমরা দিব না।’
দলের আরেক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, খেলা রাম খেলে যাও। সরকার যেভাবে নাড়াচ্ছে, সেভাবে জামায়াত নড়ছেÑ এটা স্পষ্ট হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কয়েকজনের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের আলাপ হয়। তারা বলছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে। জামিনযোগ্য মামলায়ও তিনি জামিন পাচ্ছেন না। ধারাবাহিকভাবে নেতাকর্মীদের আটক করা হচ্ছে। দুদিন আগেও ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু কারাগারে। সেখানে যুদ্ধাপরাধের মামলার আসামি জামায়াতের আমির কীভাবে জামিন পান?
শুধু জামিনই নয়, তাদের নেতাকর্মীরা এখন প্রকাশ্যে। যুদ্ধাপরাধের মামলায়ও গতি নেই। এসবের মধ্যে একটি আঁতাতের লক্ষণ দেখছে বিএনপি। তাদের ভাষায়, খেলা রাম খেলে যাচ্ছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জামায়াত।
সম্প্রতি ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াত জোটের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। অন্যদিকে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নয়াপল্টনের বৈঠক ও আগের দিন স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতাদের প্রায় সবাই জামায়াতের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিএনপি নেতারা সবাই একবাক্যে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করবেন না। তারা জোট ছাড়তে চাইলে যাক।
গত ৯ অক্টোবর উত্তরার একটি বাসায় দলীয় বৈঠক থেকে মকবুল আহমাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার সঙ্গে বৈঠক থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগর আমির মো. শাহজাহান, মহানগর সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমির জাফর সাদেকসহ ১০ জন গ্রেপ্তার হন। মিয়া গোলাম পরওয়ার ও শফিকুর রহমান এরই মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা রয়েছে। সব ক’টি মামলায় তিনি সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। গতকাল জামিনের আদেশ কারাগারে পৌঁছলে জামায়াতের আমির মুক্তি পান।
মকবুল আহমাদের আগের দিন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুর রহমান মাসুদ। তারাও কয়েক মাস আগে মুক্তি পেয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন