মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গেরই আলাদা সমস্যা আলাদা আলাদা রোগ হয়ে থাকে। ঠিক তেমন কিছু সমস্যকা যৌনাঙ্গেও হয়ে থাকে। আর যৌনরোগ মানেই শুধুমাত্র এইড্স নয়। আরো বহু যৌনরোগ রয়েছে যা ঠিকমতো চিকিৎসা না-হলে মারণ আকার ধারণ করতে পারে। পুরুষ ও মহিলা উভয়েই সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারেন এই সব রোগ থেকে।
যৌনরোগ বা যৌন সংসর্গের ফলে সংক্রামিত রোগের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সব সময় যে অবাধ সঙ্গমের ফলেই এই ধরনের রোগ হয় তা নয়, কোনো একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে বহুবার শারীরিক সম্পর্কের ফলেও এই রোগ হতে পারে। এইড্সের সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন কিন্তু এটি ছাড়াও আরও অনেক যৌনরোগ রয়েছে। জেনে রাখুন তাদের নাম ও লক্ষণ।
১. ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস: যোনি থেকে নিঃসরণে দুর্গন্ধ এই রোগের লক্ষণ। অন্যান্য রোগের তুলনায় এই রোগ খুব সহজেই সেরে যায়।
২. গনোরিয়া: সচরাচর ক্ল্যামিডিয়া এবং গনোরিয়া একই সঙ্গে হয়। যোনি বা পুরুষাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ, মূত্রত্যাগ করার সময় যন্ত্রণা ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ। চিকিৎসা না করলে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ।
৩. ক্ল্যামিডিয়া: যোনি এবং পুরুষাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ এই রোগের লক্ষণ। গড়ে ৫০ শতাংশ পুরুষ ও ৭০ শতাংশ মহিলাদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। দ্রুত চিকিৎসা করলে সেরে ওঠা সম্ভব। ক্ল্যামিডিয়া হলে খুব সহজেই অন্যান্য যৌনরোগ বাসা বাঁধে শরীরে।
৪. সিফিলিস: প্রাচীনকাল থেকেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে সাম্প্রতিক কালে সহজেই সারানো যায় এই রোগ। কিন্তু রোগ বেড়ে গেলে তা সাঙ্ঘাতিক যন্ত্রণাদায়ক। যৌনাঙ্গ, পায়ু এবং মুখে আলসার হয়, এমনকী চোখ এবং মস্তিষ্কও আক্রান্ত হয়। যৌনরোগগুলির মধ্যে অন্যতম মারণ রোগ। তবে প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের লক্ষণ শরীরে চট করে ধরা পড়ে না।
৫. এইচআইভি: এইচআইভি ভাইরাস মারণ নয় কিন্তু এই রোগের মূল লক্ষণ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়া। তাই এই ভাইরাস শরীরে থাকলে অন্য যে কোনও কঠিন রোগ হলে তা মারণ আকার ধারণ করে।
৬. যৌনাঙ্গে হার্পিস: ৮০ শতাংশ মানুষ যাঁদের যৌনাঙ্গে হার্পিস রয়েছে তাঁরা জানেন না যে তাঁদের শরীর আসলে একটি বিশেষ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। অজান্তেই তাঁরা সঙ্গী বা সঙ্গিনীর শরীরে সংক্রামিত করেন এই ভাইরাস। যৌনাঙ্গে ছোট ছোট ফোস্কার মতো র্যাশ এই রোগের লক্ষণ। ফোস্কা পরার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে চুলকানির অনুভূতি হয় যৌনাঙ্গে। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বার বার এই র্যাশগুলি বেরতে থাকে।
৭. হেপাটাইটিস বি: অনেকেই হয়তো জানেন না, এই রোগটিও যৌন সংসর্গের ফলে ছড়ায়। একই ভাবে ছড়াতে পারে হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস সি তবে তার সংখ্যা খুবই কম। লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, মূত্রের রং পরিবর্তন, গা বমি ভাব ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ হতে পারে।
৮. যৌনাঙ্গে আঁচিল বা ওয়ার্ট: যৌনাঙ্গ এবং পায়ুর আশেপাশে আঁচিলের মতো র্যাশ এক ধরনের যৌন রোগ। একত্রে একসঙ্গে অনেকগুলি আঁচিল দেখা যায়। হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস, যা সার্ভিক্যাল ক্যানসারের কারণ এবং যৌন সংসর্গে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়ায়, তাই এই রোগের জন্ম দেয়। অনেক সময় এই আঁচিলগুলি ফোস্কার মতো হয় আবার অনেক সময় এগুলি আলসারেও পরিণত হতে পারে।
৯. ট্রাইকোমোনিয়াসিস: যৌনাঙ্গ থেকে অস্বাভাবিক ক্ষরণ, যৌনক্রিয়ার সময় যৌনাঙ্গে যন্ত্রণা এবং মূত্রত্যাগের সময় যন্ত্রণা এই রোগের লক্ষণ যদিও সঠিক চিকিৎসায় দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।
১০. যৌনকেশে উকুন: মাথার চুলের মতো যৌনাঙ্গের কেশেও উকুন বাসা বাঁধতে পারে এবং শারীরিক মিলনের সময়ে তা অন্যের শরীরে সংক্রামিত হয়। যৌনাঙ্গের আশপাশে চুলকানি হলে তা এই কারণে হতে পারে।
এই রোগ বা সমস্যাগুলোর যেকোনো একটি যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারো যদি দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে যান। এবং চিকিৎসা নিন। হেলামি করে দেকে আনতে পারেন আপনার বিপদ।
তথ্য সূত্র: MN.C
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন