এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫সহ সব সূচকের ছন্দপতন হয়েছে। গত ৬ বছরের মতো এবারও জিপিএ-৫ পাওয়ায় ছেলেরা আর পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড আর জিপিএ-৫এর শীর্ষে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ১০টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। গত বছরের তুলনায় উভয় সূচকই কমেছে। এর জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি এবং সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে বিজ্ঞানের ভীতি কমায় পরীক্ষার্থী, পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন শিক্ষামন্ত্রী জানান, আটটি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ১৭ লাখ ৮১ হজার ৯৬২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। শতকরা পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৫। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ২৯। এ হিসেবে পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ৯৪ ভাগ। এবছর জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ চার হাজার ৭৬১ জন। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন। গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ কমেছে পাঁচ হাজার। এবার দুই হাজার ২৬৬ প্রতিষ্ঠানের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল চার হাজার ৭৩৪টি। ৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থী পাস করেনি। গত বছর এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল ৫৩টি। গত বছরের চেয়ে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৪০টি। গতকাল সকাল ১০টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী সব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে ফলাফলের সারাংশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে দেন। ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের স্কুল-মাদরাসায় আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করে। সন্তান কাঙ্ক্ষিত ফল করায় অভিভাবকরাও আনন্দিত।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৪ লাখ ২২ হাজার ৩৭৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮ জন। শতকরা পাসের হার ৮১.২১। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৮.৭০। গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে ৭.৪৯ ভাগ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৭ হাজার ৯৬৪ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৭৬৯ জন। গত বছরের চেয়ে এক হাজার ১৯৫ জন জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে। এবার রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৯ জন। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৯, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ৪৮১ জন। চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৯, জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৩৪৪ জন। কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৫৯ দশমিক ০৩, জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৪৫০ জন। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ০৪, জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৪৬০ জন। বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ২৪, জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ২৮৮ জন। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮০ দশমিক ২৬, জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৬৬৩ জন। দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৮, জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৯২৯জন। মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ২০, জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৯২৯ জন। গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে ১২ দশমিক ০২ ভাগ। জিপিএ ৫ কমেছে তিন হাজার ২৮৫ জন। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৯, জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ১৮৭ জন। গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে চার দশমিক ৪২ভাগ। জিপিএ-৫ কমেছে দুই হাজার ৯১০ জন।
সকল শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রদের গড় পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৩, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ হাজার ৪৮৮ জন। ছাত্রীদের গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৭৮, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫১ হাজার ২৭৩ জন। এ বছর ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার ০ দশমিক ৮৫ বেশি। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রদের গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৭১। ছাত্রীদের গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ৭৮। এ বছর পরীক্ষায় ছাত্রের তুলনায় ১৯ হাজার ১০৫ জন ছাত্রী বেশি অংশগ্রহণ করেছে এবং ২২ হাজার ৪৯৪ জন ছাত্রী বেশি পাস করেছে। ছাত্রের তুলনায় ০ দশমিক ৯৮ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৩৫, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২ হাজার ৩৮ জন। মানবিকে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৮, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার তিন জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮০ দশমিক ২১, জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৮২৩ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর বিজ্ঞান শাখায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৬৮১ জন বেড়েছে এবং ৩২ হাজার ১২৬ জন বেশি পাস করেছে। বিজ্ঞান শাখায় জিপিএ-৫ এর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় এ বছর দুই হাজার ৬৫৪ জন বেশি পেয়েছে।
এ বছর ২৩টি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছে। সকল শিক্ষা বোর্ডে অভিন্ন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। গত ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে ২রা মার্চ পর্যন্ত তত্ত্বীয় এবং ৪ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরীক্ষা শেষের ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করছে। এবারো এর ব্যত্যয় ঘটেনি। ৬০ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করেছে। এবার প্রশ্নপত্রে এমসিকিউ অংশের ১০ নম্বর কমিয়ে সৃজনশীলে ১০ নম্বর বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হলে সেখানে এমসিকিউ অংশের নম্বর ৩০ এবং সৃজনশীল অংশের নম্বর ৭০ করা হয়।
ওদিকে আজ থেকে ১১ই মে পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। টেলিটক মোবাইল ফোন থেকে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখতে হবে; স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখতে হবে; এরপর ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ২৫০ টাকা ফি দিতে হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন