জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ৪১ তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন মো. আদনান। সদ্য স্নাতক শেষ করা ওই মেধাবী ছাত্র ইতিমধ্যে একটি চাকরিও নিয়েছিলেন। চাকরির সুবাদে থাকতেন যাত্রাবাড়ীতে। সাপ্তাহিক ছুটির জন্য জাবি ক্যাম্পাসে এসে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ওই ছাত্র প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও হল সূত্রে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।
মীর মশাররফ হোসেন হলে আবাসিক কয়েক শিক্ষার্থী জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে বেশি দুধ দিয়ে চা খেয়ে হলে ফিরেছিলেন মো. আদনান। রুমে যাওয়ার আগে চারটা সিগারেট নিয়ে নিয়েছিলেন সঙ্গে। দোকানে ১০ টাকা বাকি ছিল, সেটাও পরিশোধ করেছেন তিনি।
জানা গেল, গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঠিক মতো বনি বনা হচ্ছিল না। কারণ মেয়েটি ছিলো ডিভোর্সি। আদনান মুঠোবার্তায় তাকে জানালেন, ‘আমি সুসাইড করবো।’ মেয়েটি রিপ্লে দিলো, ‘আর ইউ কিডিং মি?’ এরপরই সম্ভবত ফ্যানের সঙ্গে লাইলনের দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন আদনান। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সদা হাস্যোজ্জ্বল ক্যাম্পাসের এই চিরচেনা মুখটি। আদনানের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি পরিবারের সঙ্গে যাত্রাবাড়ীতে থাকতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত পৌনে দশটার দিকে আদনানের রুমে শিট নেওয়ার জন্য যান একই বিভাগের শিক্ষার্থী ৪৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জোনাইদ। কিন্তু রুমে গিয়ে তিনি দেখতে পান আদনানের রুম ভিতর থেকে বন্ধ করা। পরে জোনাইদ রুমের জানালা দিয়ে ভিতরে আদনানের দেহ ঝুলতে দেখেন।
এরপর হলের শিক্ষার্থীরা দরজা ভেঙে আদনানকে বের করে। এ সময় আদনানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অমিতাভ দাস তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তাকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আনায়ারুল কাদির নাজিম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে তাৎক্ষণিক এই মৃত্যুর খবরে ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদনানের রুম (৪৫০/ বি) সিলগালা করে তার মোবাইল ফোনটি হেফাজতে নিয়েছে।
রাত একটার দিকে সাভার থানা পুলিশ ও প্রক্টর প্রফেসর তপন কুমার সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৫০/ বি নম্বর কক্ষ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় প্রেমিকাকে নিয়ে আদনানের লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করে পুলিশ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন