ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে আটককৃতদের ছবি তুলতে গেলে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘নিউজ টুয়েন্টফোর’র সাংবাদিকের ক্যামেরা নিয়ে টানাহেঁচড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ। তার সঙ্গে ক্যামেরা টানাহেঁচড়ায় যোগ দেন সহকারী প্রক্টর আবুল কালাম লুৎফুর কবিরও।
এসময় ঢাবি প্রক্টর চিৎকার করে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার করেন।
শুক্রবার দুপুরে ঢাবির কলা ভবনের প্রক্টর অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। প্রক্টর আমজদ চ্যানেলটির সাংবাদিক মাহমুদ হাসানকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে জালিয়তদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে আনা হয়। আটককৃতদের মধ্যে সৌমিকা প্রতিচি সাত্তার ও মোছা. আরিফা বিল্লাহ তামান্না নামের দুজন মেয়ে ছিল।
এই দুই মেয়ে জালিয়তের একজন সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুসের আত্মীয় বলে জানা যায়। গোলাম কুদ্দুস ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে অবস্থান করে। তিনি মেয়েটির জন্য সুপারিশ করতে আসেন বলেও জানায় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র।
এসময় প্রক্টর অফিসে কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেননি প্রক্টর আমজাদ। যদিও কিছুক্ষণ আগেও সাংবাদিকরা ভেতরে অবস্থান করছিলেন।
আটককৃতদের ছবি তুলতে প্রক্টর অফিসের বাইরে ক্যামেরা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ‘নিউজ টুয়েন্টিফোর’র ওই সাংবাদিক। প্রক্টর আমজাদ অফিস থেকে বাইরে এসে ওই সাংবাদিককে দেখে রেগে যান। পরে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এসময় উচ্চস্বরে প্রক্টর বলতে থাকেন, ‘তুমি রিপোর্টার আর যাই হও ক্যামেরা বন্ধ করো। এটা কোনো ইথিক্স-এ পড়ে ছবি তুলবে। আমাকে বুঝাও তুমি কী জন্য ক্যামেরা তাক করে আছো।’
এসময় ক্যামেরাপারসন বলেন, ‘কেউ এখন রুম থেকে বের হয়নি, ছবি তুললাম কিভাবে?’
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রক্টর বলেন, ‘ক্যামেরার হেডলাইট বন্ধ করো। কেন আমার কথা রেকর্ড করলে?’
এসময় ওই সাংবাদিককে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন ঢাবি প্রক্টর আমজাদ হোসেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সংবাদকর্মীদের কাছে আছে।
ওই সাংবাদিক কথা বলতে চাইলে প্রক্টর তাকেও হুমকি-ধামকি দেন। অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন প্রক্টর।
বিতর্কিত ভূমিকায় দেখা যায় সহকারী প্রক্টর আবুল কালাম লুৎফুর কবিরকেও। তিনি কয়েকবার সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
‘নিউজ টুয়েন্টিফোর’র সাংবাদিক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতোকত্তর শেষ করে বিভিন্ন চ্যানেলে দীর্ঘ পাঁচ বছর সাংবাদিকতা করেছি। কিন্তু কোথাও এভাবে হেনস্থার শিকার হইনি। আজ ঢাবি প্রক্টর আমাকে এভাবে হেনস্থা করেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ‘ক্যামেরা টানাটানি তেমন হয়নি। আর আমার অফিসের কর্মচারীরা মনে করেছিল ঝগড়া রেকর্ড হয়েছে, তাই এমন হয়েছে। ঝগড়া রেকর্ডিং করা ঠিক নয়।’
জালিয়তদের একজন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতা গোলাম কুদ্দুসের আত্মীয় বলেই ছবি তুলতে দেননি- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা মানবিক বিষয়। মেয়েদের ছবি উঠানো ঠিক নয়।’
এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমি তো ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না। সেজন্য কিছু বলতে পারছি না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন