রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ইনস্টিটিউট আছে ৬ টি। উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যে ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হলেও পথ হারিয়েছে তারা।
গত ৫ বছরের তথ্য পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে। অনেক ইনস্টিটিউটে গবেষণাকে বাইরে রেখে খোলা হয়েছে সান্ধ্য কোর্স। তাছাড়া বছর বছর নতুন নতুন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা পেলেও গবেষণায় মন নেই শিক্ষকদের।
এভাবে গবেষণা ইনস্টিটিউট খুলে সান্ধ্য কোর্স পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও শিক্ষার পরিবেশ দুইটাই নষ্ট হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকরা।
এর মধ্যে গত দুই বছর হলো উচ্চতর ভাষা গবেষণা ও বিভাগগুলোতে ইংরেজী কোর্স পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে খোলা হয়েছে ‘ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজেজ ইনস্টিটিউট’।
তবে ক্লাসরুম সংকটের বাহানা দেখিয়ে এখন পর্যন্ত এই ইনস্টিটিউটি তার মূল শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণা শুরু করেনি। যদিও মূল কাঠামো ও গবেষণা বাইরে রেখে চালু করা হয়েছে সান্ধ্য মাস্টার্র্স, সার্টিফিকেট কোর্স।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০২ সালের দিকে প্রস্তাবনা হলেও অবকাঠামো সংকটে দীর্ঘ ১৩ বছর পর ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর ইনস্টিটিউট হিসাবে যাত্রা শুরু করে ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটটি। ইনস্টিটিউটটির মূল শিক্ষা কাঠামোতে রয়েছে মাস্টার্স, এম ফিল, পি-এইচডি। তবে দুই বছরে ইনস্টিটিউটটি এ সংক্রান্ত কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করেনি।
সেখানে দুইটি গ্রুপে প্রায় শ’খানেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে ক্লাস করছেন। আবারও এইচ এসসি পাশকৃত শিক্ষার্থীদেরও ৩ মাসের কোর্সের সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। এভাবে সান্ধ্য কোর্সে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল শিক্ষা কার্যক্রম।
মূল শিক্ষা কার্যক্রম রেখে সান্ধ্য কোর্স পরিচালনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট পরিচালক প্রফেসর আতর আলী বলেন, আমাদের কোন ক্লাসরুম নেই। রুম প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিব। ক্লাসরুম না থাকলে শিক্ষার্থী ভর্তি করবো কিভাবে? তিনি আরও বলেন, শিক্ষকরা বসে থাকবেন কেন.?
আর কবে নাগাদ মূল শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরবেন এমন অনিশ্চয়তার কথা জানান তিনি। বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত সুবিধা দিচ্ছে না তাই শুরু করছি না। যখন দিতে পারবে তখন থেকে কার্যক্রম শুরু হবে।
ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট। ১৭ বছর আগে যাত্রা শুরু করে ইনস্টিটিউটটি। ইনস্টিটিউটটিতে এখন সান্ধ্য এমবিএ, এম.ফিল পিএইচডি প্রোগাম চালু আছে। এদিকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি শুরু হয়েছে। তবে গবেষণায় মন নেই ইনস্টিটিউটের শিক্ষকের।
বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত এই ৫ শিক্ষাবর্ষে ইনস্টিটিউটের ৪ জন শিক্ষকের কোন গবেষণা নেই।
আর ডিগ্রি প্রদানের বেলায় ও নাজুক বার্ষিক প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য মতে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থীকে আর যেখানে এই ৫ শিক্ষাবর্ষে কোন গবেষককেই পিএইচডি প্রদান করা হয়নি।
ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম স্টাটিটিউটের মাধ্যমে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। বর্তমানে এম.ফিল, পি-এইচ.ডি, পি.জি.ডি.এড, এম.এড কোর্স চালু আছে। দুই বছর হলো ইনস্টিটিউটটিতে চালু হয়েছে ৪ বছর মেয়াদি সম্মান কোর্স।
তবে গবেষণার ব্যাপারে উদাসীন ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৯-১০ থেকে ১৪-১৫ এই ৫ শিক্ষাবর্ষে কোন শিক্ষকের গবেষণা নেই। ইনস্টিটিউটটিতে মোট শিক্ষক আছেন ১১ জন।
আর গত ৫ শিক্ষাবর্ষে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে ১৪ জন শিক্ষার্থীকে। ৯ জন গবেষককে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউটের নামে সান্ধ্য কোর্স চালু করাসহ উদ্দেশ্য থেকে সরে আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহমেদ ইমিতয়াজ বলেন, যেখানে মূল কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না। সান্ধ্য কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। তাহলে শুধু মাত্র সান্ধ্য কোর্সের জন্য তো ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন নেই।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর এম এ বারী বলেন, সান্ধ্য কোর্সের জন্য কোন ইনস্টিটিউট খোল হয়নি। গবেষণাসহ বেশ উদ্দেশ্য নিয়েই ইনস্টিটিউট খোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে পাশ হওয়া পরিচালনা বিধি অনুযায়ি তারা পরিচালনা করেন।
তবে ব্যতিক্রম হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ অধ্যায়ন ইনস্টিটিউট, পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বায়োলোজিক্যাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটগুলো তুলনামূলক ভাল গবেষণা করছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্র্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন