পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হবে বিশেষ ধরনের ইলেক্ট্রনিক বক্স। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নতুন এ প্রযুক্তি ব্যবহারের চিন্তা করছে শিক্ষা বোর্ড।
জানা গেছে, প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি থেকে শুরু করে এসএসসি, এইচএসসিÑ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা, সর্বত্র বিস্তৃত হয়েছে প্রশ্নফাঁসের ব্যাধি। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য শিক্ষাবিদ এবং সমাজের বিশিষ্টজনরা নানা পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনকে। আলোচনায় এসেছে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরীক্ষা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে একটি শিক্ষা বোর্ডের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বাস্তবে এটি অনেক দুরূহ ব্যাপার। কেননা দেশের হাওর, চরাঞ্চলেও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। যেগুলোয় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এ ছাড়া দক্ষ জনবল সংকটও আছে। তাই এ পদ্ধতি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে, তাদের সবার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই। সরকারকে বিব্রত করতেও এই পথ বেছে নিয়েছে একটি কুচক্রী মহল। প্রশাসনের নিñিদ্র নিরাপত্তাভেদ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। প্রযুক্তির জন্য দেশের যে কোনো এক প্রান্তে প্রশ্নফাঁস হলে মুহূর্তে গোটা দেশে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। কোনো একটি সামাজিক ওয়েবসাইট বা অ্যাপস ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কে প্রথম কোনো ডিভাইস দিয়ে ছবি তুলল, আপলোড দিল, কার মাধ্যমে কারা কখন ছড়িয়ে দেয়Ñ প্রতিটি স্তরে নির্ণয় করা খুবই কঠিন। অনেকে ভুয়া তথ্য দিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন থাকে। ওই জায়গাটি শনাক্ত করা দরকারÑ কে, কোথায় ও কখন প্রশ্নের প্যাকেট খুলল। এর পর আসে অনলাইনে প্রচারের বিষয়টি।
গত ২৩ জুলাই সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসেন জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকার প্রযুক্তি ব্যবহারের চিন্তা করছে।
প্রসঙ্গটি অনুসন্ধান করে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উদ্ভাবন করেছে প্রশ্নপত্র পরিবহনের জন্য বিশেষ ধরনের ‘ইলেক্ট্রনিক বক্স’। এতে ব্যবহার করা হয়েছে জিপিএস, অ্যালার্ম সিস্টেম এবং ওয়ানটাইম লক পদ্ধতি। বক্সটিতে প্রশ্নপত্র পরিবহনকালে কোথায় ও কখন অবস্থান করছে, সব কিছুই কেন্দ্রীয়ভাবে জানতে পারবেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। এমনকি এটি খোলার চেষ্টা করা হলেও বার্তা চলে যাবে কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে। এ ছাড়া একবার খোলা হলে দ্বিতীয়বার আর লক করা যাবে না বিশেষায়িত এই প্রযুক্তির বক্স। ফলে প্রশ্নপত্র বক্সে নেওয়ার আগে নাকি পরে, কখন ফাঁস হলোÑ সেটি সহজে ধরা পড়বে। ওই সময়ে যার দায়িত্ব ছিল, তাকে দায়িত্বহীনতার জন্য অভিযুক্ত করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বিশিষ্টজনরা নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরাও ভাবছি কার্যকর একটি উপায় বেছে নিতে। বুয়েট থেকে একটি ডিভাইস (ইলেক্ট্রনিক বক্স) উদ্ভাবন করা হয়েছে। সেটি ব্যবহার করতে হলে কী পরিমাণ বক্স তৈরি করতে হবে, কত টাকা ব্যয় হবে, এতে কেমন সময় লাগবে? এসবের বাস্তব দিকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য হলে এটি ব্যবহার করা যাবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতেÑ প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে শুরু করে ছাপানো, পরিবহন ও বিতরণ, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সব ধরনের কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস রোধে সরকারের গৃহীত সব ধরনের উদ্যোগ প- হয়ে যাচ্ছে একটি কুচক্রী মহলের কারণে। এক সময়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও বিগত সময়ে শুধু প্রচারের জন্যই প্রশ্নফাঁস হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীক্ষার আগের রাতে, পরীক্ষার দিন সকালেÑ এমনকি পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেও প্রশ্নফাঁস করে প্রচার করে একটি মহল। এরা প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বরাবরই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন