কুড়িগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় বছর ধরে উপবৃত্তি বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠান থেকে কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এতে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রধান শিক্ষক এবং জেলা মনিটরিং অফিসারের উপবৃত্তি বন্ধ করা নিয়ে রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।
নাগেশ্বরী উপজেলার ইন্দ্রগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৪০ শতক জমিতে স্থাপিত হয় ১৯৮৪ সালে। জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত উপবৃত্তি পেলেও ২০১৬ সালের জুন মাস থেকে এখানে উপবৃত্তির টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে ২৫৪ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে প্রাক প্রাথমিকে ১৭ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৪০ জন, ২য় শ্রেণিতে ৫০ জন, ৩য় শ্রেণিতে ৬৮ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৪৬ জন, ৫ম শ্রেণিতে ৩৩ জন। তবে ৫ম শ্রেণিতে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৬ জন শিক্ষার্থী। উপবৃত্তি বন্ধ থাকায় কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
আশেপাশের সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন উপবৃত্তি পায় তখন দেড় বছর যাবৎ উপবৃত্তি না পেয়ে হতাশ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র লাভলু মিয়া, ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী খাদিজা, নাসিমা খাতুন, মেহেদি এবং ৩য় শ্রেণির আলমগীর বলে, আমাদেরকে প্রায় দেড় বছর ধরে উপবৃত্তি দেয় না। এতে করে লেখাপড়ার খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছে। উপবৃত্তি চাইলে হেড স্যার বলেন সরকার টাকা না দিলে আমরা কই থেকে দিব।
অভিভাবকরা জানান, এই এলাকার মানুষজন অভাবগ্রস্ত। সরকারের দেয়া উপবৃত্তির টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়াশুনার খরচ জোগান হয়। গেল দেড় বছর থেকে উপবৃত্তি বন্ধ হয়ে আছে। কাজকর্ম কম আবার যে কাজ পাওয়া যায় তাতেও মজুরি কম দেয়। এতে যে টাকা পাই সেই টাকা সংসারের পেছনেই খরচ হয়ে যায়।
তারা আরো জানান, জেলা মনিটরিং অফিসার ঢাকার একটি ইটভাটার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই এলাকার দরিদ্র মানুষকে শ্রমিক হিসেবে নিয়ে তিনি দাদনের মাধ্যমে ইটভাটাতে পাঠান। শ্রমিক পাঠানোর টাকা নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে এই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, ইটভাটায় শ্রমিক পাঠানোর টাকা নিয়ে এলাকার ভেদাং ফারুকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় ওই কর্মকর্তার। শ্রমিককে দেয়া কিছু টাকা আমার অজান্তে আমার ব্যাংক একাউন্টে পাঠান তিনি। এসব টাকা এবং শ্রমিক না যাওয়ার কারণে জেলা মনিটরিং কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে উপবৃত্তির টাকা বন্ধ করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোশলেম উদ্দিন শাহ বলেন, জেলা মনিটরিং অফিসার ভিজিট করে ওই বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি বন্ধের সুপারিশ করলে তা বন্ধ হয়ে যায়। তাকে আবার ভিজিট করে উপবৃত্তি খুলে দেয়ার অনুরোধ করা হলেও তিনি ভিজিটে যাননি। পরে আমি ভিজিট করে উপবৃত্তি দেয়ার জন্য পিডি বরাবর রিপোর্ট দিয়েছি।
তবে জেলা মনিটরিং অফিসার রোকনুজ্জামান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়মিতভাবে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে পরিদর্শন ফরমের ২৫টি ক্যাটাগরি পূরণ করে পাঠানো হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই উপবৃত্তি দেয়া বা বন্ধ করে থাকে মন্ত্রণালায়। এখানে আমার কোনো হাত নেই।
তিনি আরো বলেন, আমার মধ্যস্থতায় আমার এক আত্মীয় ইটভাটায় শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে প্রায় দেড় লাখ টাকার ডিল করেন ওই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে। সেটা নিয়ে ঝামেলা হয়। তবে উপবৃত্তি বন্ধের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় উপবৃত্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ২৩৪টি। এরমধ্যে ৪টি বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির টাকা পাওয়া স্থগিত রয়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলার ইন্দ্রগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলিপুর উপজেলার ঠুটাপাইকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আব্দুল হাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি প্রদান বন্ধ রয়েছে।
সরকার নিয়মিতভাবে প্রাক প্রাথমিকের জন্য প্রতি মাসে ৫০ টাকা হারে বছরে ৬শ টাকা এবং প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত একশ টাকা হারে বছরে ১২শ টাকা করে দেয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন