মেহেদী হাসান নিলয় নামে প্রাইভেট কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র নরসিংদী সরকারী কলেজে ঢুকে স্বর্ণা আক্তার নামে অনার্স ৩য় বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর ঘটনা নিয়ে নরসিংদী শিক্ষাঙ্গনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কলেজে পড়তে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়ে পড়েছে নরসিংদী সরকারী কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের হাজার হাজার ছাত্রী। সার্বক্ষণিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় পতিত হয়েছে অভিভাবক মহল।
আলোচনা সমালোচনা ঝড় বইছে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ ব্যাপক জনগণের মধ্যে। নরসিংদী সদর মডেল থানায় ডায়েরী করার তিন দিন পরও পুলিশ বখাটে ছাত্র নিলয়কে গ্রেফতার করতে পারছে না। জানা গেছে, নরসিংদী সরকারী কলেজে বর্তমানে প্রায় ২২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করে। কিন্তু কলেজটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই দুর্বল। ছাত্র সেজে প্রতিদিন বিভিন্ন বখাটে মাস্তান ছেলেরা কলেজে ঢুকে আড্ডা দেয়, ছাত্রীদেরকে উত্যক্ত করে।
এরা কোন না কোন রাজনৈতিক দল বা কোন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া থাকার কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। কলেজের মূল ফটক থেকে শুরু করে পশ্চিম দিকেই রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট কলেজ। রাজনীতিকদের তত্ত¡াবধান এবং কলেজটির উন্নয়নে কোন মাষ্টারপ্ল্যান না থাকায় কলেজটির যথাযথ উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে না। স্থানীয় রাজনীতিকদের উদাসীনতা, ব্যক্তিগত দুর্বলতা ও অদূরদর্শীতার কারণে কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত স্থাপনা। এসব ব্যক্তিগত স্থাপনার কারণে শুধু কলেজ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যই বিনষ্ট হয়নি, কলেজের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়েছে।
প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী কলেজে লেখাপড়া করতে আসছে। আর এরই সাথে কলেজে ঢুকে পড়ছে ভিন কলেজের ছাত্র ও বখাটে মাস্তানরা। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের ভিড়ে তারা কলেজে ঢুকে ছাত্রীদেরকে উত্যক্ত করছে। এমনি সুযোগ নিয়ে গত সোমবার নরসিংদী প্রাইম কলেজ নামে একটি প্রাইভেট কলেজের একাদশ শ্রেণীর বখাটে ছাত্র মেহেদী হাসান নিলয় কলেজে ঢুকে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী স্বর্ণা আক্তারকে উত্যক্ত করতে থাকে। তার সাথে ছিল আরো কয়েকজন বখাটে। তবে তারা ছিল তার কাছ থেকে একটু দূরে। অব্যাহত উত্যেক্ত করণের মুখে স্বর্ণা প্রতিবাদ জানালে বখাটে নিলয় তার প্রতি মারাত্মকভাবে ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে সে মেয়েটিকে শত শত ছাত্র-ছাত্রী সামনে মারধোর করে শ্লীলতাহানী ঘটায়।
বিষয়টি চরম আকার ধারণ করলে অন্যান্য বখাটেরা তাকে কলেজ থেকে বের করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে নরসিংদী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ, প্রিন্সিপাল ড. আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন ঘটনার ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নরসিংদী প্রাইম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুজ্জামান জানিয়েছেন বখাটে ছাত্র মেহেদী হাসান নিলয়কে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার ফরম ফিলাপ স্থগিত রাখা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নির্যাতিতা স্বর্ণা আক্তার নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি ডায়েরী করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও পুলিশ বখাটে নিলয়কে গ্রেফতার করতে পারছেনা। এই ঘটনাটি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। হাজার হাজার এফবিগণ বখাটে নিলয়কে গ্রেফতার করে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন