ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরণ করা সেই ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন মানিকের অন্যতম সহযোগী মীর মেহেদী হাসান টিটু আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
জানা যায়, ধর্ষক মানিকের এ সহযোগী জাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ও কৃষকলীগের সভাপতি মোতাহের হোসেন মোল্লার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীপন্থিদের একাংশের প্যানেল ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল জোট’ থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনি নির্বাচন করছেন। তাকে এই প্যানেল থেকে মনোনয়ন দেয়ায় হতবাক হয়েছেন ভোটার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, শিক্ষক লাঞ্ছনায় অভিযুক্ত টিটু ১৯৯৮ সালে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিকের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। আন্দোলন চলাকালে মানিক ও টিটু ১৯৯৮ সালের ২৩ আগস্ট নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদকে ছবি তোলার দায়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
ওই ঘটনায় ৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট মানিককে ১ বছর এবং টিটুকে ২ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। একই সাথে সিন্ডিকেট উভয়কে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক বহিষ্কারে সিদ্ধান্ত শোনার পর মানিক ও টিটুর নির্দেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ‘এ ঘোষণা মানি না’ শ্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন ভাংচুর চালায়। সে সময় ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে অনশনরত ছাত্রীদের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এছাড়া প্রতারণা করে আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগ আছে টিটুর বিরুদ্ধে। জানা যায়, চাকরি দেয়ার কথা বলে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন টিটু। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক এক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ‘টিটু আমার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা ধার নিয়ে আর দেয়নি। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মচারীর ছেলে-মেয়েকে চাকরি দেয়ার কথা বলে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই টিটু।’
এছাড়া সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে জসিম উদ্দিন মানিক মিষ্টি বিতরণ করলে ১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে। আন্দোলনের মুখে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয় মানিক-টিটুসহ তাদের সহযোগীরা। সেই থেকে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ২ আগস্টকে ‘খুনি-ধর্ষক প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে ধর্ষকদেরকে নির্বাচনের সুযোগ করে দেয়ায় আমরা হতবাক হয়েছি। তাদেরকে এভাবে ক্যাম্পাসে আসার সুযোগ করে দিলে এ সংস্কৃতির রাজধানী আবার কলঙ্কিত হবে। তাই এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তারা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মীর মেহদী হাসান টিটুকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনাগুলো মীমাংসিত হয়ে গেছে। তাই এসব বিষয় নিয়ে আমি এখন কোন মন্তব্য করতে রাজি নই।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন