সপ্তাহখানেক আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাজারিবাগের একটি বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে আত্বহত্যা করে মারা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী তরুণ হোসেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে এটা নিছক আত্বহত্যা নয় বরং পরোক্ষ হত্যা।
এ আত্বহত্যার দায় কি তরুণের শুধু্ই একার?
নাকি তার ডিপার্টমেন্টের?
নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অমানবিক সংস্কৃতির?
নাকি এ আত্বহত্যার দায় শুধুমাত্র তরুণের গায়ের অনুজ্জল রঙ কিংবা তার পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার?
বাণিজ্য অনুষদের ফিন্যান্স বিভাগে পড়াশোনার চাপ অপরাপর অন্যান্য বিভাগের তুলনায় অনেকটা বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ সময় কেটে যায় ক্লাস, প্রেজেন্টেশন কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট তৈরীর কাজে।ছাত্রদের কাউন্সেলিং কিংবা মানসিক সহায়তার জন্য কয়েকজন শিক্ষক থাকলেও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত কোন শিক্ষার্থী সচরাচর তাদের দ্বারস্থ হতে চান না।কারণ অনেক সময় তাদের এসব ক্ষেত্রে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়।ক্লাস চলাকালীন সময়েও কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন তুচ্ছ কারণে হেয় প্রতিপন্ন করে থাকেন।শিক্ষার্থীরা মলিন জামাকাপড় পড়ে আসার কারণেও শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়।ঠিকমতো ইংরেজি বলতে না পারা কিংবা প্রেজেন্টেশনে ভুল ইংরেজি উচ্চারণের জন্যেও অনেক সময় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের দ্বারা বাবা-মা কিংবা পরিবার নিয়ে অপ্রীতিকর কথাবার্তার স্বীকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের।আ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষকের মনঃপূত না হলেও নানাভাবে তিরষ্কৃত হতে হয় শিক্ষার্থীদের।প্রায়ই শিক্ষার্থীদের ইভিনিং এমবিএর সাথে তুলনা করে তাচ্ছিল্য করা হয়।
তৃতীয় বর্ষে বিজনেস ম্যাথ নামক একটি কোর্সে দু্বার সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে না পারায় মানসিক পীড়ায় ভুগছিলো তরুণ।ঐ কোর্সের শিক্ষক ছিলেন মোঃ সাইমুম হোসেন।তরুণের আত্বহত্যার পর বিভিন্ন শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জবাবে মোঃ সাইমুম হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের সাপ বলে আখ্যায়িত করেন।
স্যার এ এফ রহমান হলে ছিলো তরুনের আবাসস্থল।তার সঙ্গে বসবাসরত কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,যেকোন সময় হল থেকে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ডাক পড়লে অনেকসময় ক্লাসে না গিয়েও সে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক হয়ে দাড়ায়।কোন কারনে প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করা সম্ভব না হলে হলের সিনিয়র ভাইদের কাছ থেকে পরবর্তীতে পেতে হয় হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুমকি।বেশিরভাগ হলগুলোতে সপ্তাহে নিয়মিত তিনদিন গেস্টরুমে অংশগ্রহন বাধ্যতামূলক।শিষ্টাচার শেখানোর নামে গেস্টরুম গুলোতে প্রায়ই মানসিকভাবে নিগৃহিত হতে হয় গ্রাম থেকে আসা আশ্রয়হীন এসব শিক্ষার্থীদের।বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের ঢাকা শহরে অন্যত্র কোথাও থাকার জায়গা নেই বলে মুখ বুজে নিরবে সহ্য করতে হয় এসব অত্যাচার নির্যাতন।
আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে তরুণ টিউশনি করতো হাজারিবাগে।বাড়ি থেকে নিয়মিত টাকা আসতো না।গায়ের রঙ অনুজ্জল হওয়ায় বিভাগের অনেক সহপাঠি তার সাথে মিশতে চাইতো না।কারো সাথে মিশতে না পারায় বিভাগে একা একাই কাটতো তরুণের বেশিরভাগ সময়।তার অনেক সহপাঠি তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আর্থিক সাহায্য করে আসছিলো।তার বিভাগীয় এক শিক্ষকও তাকে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছিলো।
বিষন্নতায় ভোগা তরুন আত্বহত্যার জন্য বেছে নেয় হাজারিবাগের একটি নির্মাণাধীন ভবন।তার হলের বন্ধুবান্ধবদের সুত্রে জানা যায় আত্বহত্যার একদিন আগেও এফ রহমান হলের ছাদে গড়াগড়ি দেয়ার মাধ্যমে আত্বহত্যার চেষ্টা করেছিলো সে।আত্বহত্যার আগের দিন নিজের ভাইয়ের সাথে কথা বলার সময় নিজের বিষন্নতার কথা জানিয়েছিলো তরুণ।
তরুণের আত্বহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল তার বিভাগের শিক্ষার্থীরা ১৯ দফা দাবি সংবলিত একটি স্বারকলিপি পেশ করেছে ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের কাছে।এ স্বারকলিপিতে তরুণকে আত্মহুতির পথে ঠেলে দেয়ার জন্যে এবং নিজ বিভাগীয় শিক্ষার্থীদের সাপ বলে আখ্যায়িত করার জন্যে মোঃ সাইমুম হোসেনের পদত্যাগের দাবি করা হয়।
/ইনফিনিটি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন