জাবির শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নেই বিএনপি, বিভক্ত আ.লীগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ২০১৮ সেশনের নির্বাচনে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। অন্যদিকে বিএনপিন্থীরা ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠিক হবে না’ উল্লেখ করে তারা নির্বাচন বয়কট করেছেন। কিন্তু তারা নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ এর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ৬ শিক্ষক বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তারপর দলীয় সংগঠনের স্বার্থ, ভাবমূর্তি ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মূল ওই সংগঠন থেকে বিদ্রোহী সকল প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ তথ্য ব্রেকিংনিউজকে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির সভাপতি ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক (প্রশাসন) অধ্যাপক আবুল হোসেন।
বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে অধ্যাপক মো নুরুল আলম (সংগঠনটির সাবেক সভাপতি), সহ-সভাপতি পদে অধ্যাপক রাশেদা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক বশির আহমেদ (সংগঠনটির সাংগঠনকি সম্পাদক), যুগ্ম-সম্পাদক পদে শিকদার মো জুলকার নাইন, সদস্য পদে অধ্যাপক তাপস কুমার দাস ও অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী। বহিষ্কৃত এই শিক্ষকগণ বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অনুসারী বলে জানা যায়।
বহিষ্কারের বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংগঠনের স্বার্থ, ভাবমূর্তি ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার কারণে মূল সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
এদিকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘সরকার বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃনিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির ব্যক্তি স্বার্থে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ব্যবহার করে এই নিয়োগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা এই আন্দোলনে যোগ না দেয়ায় আমাদেরকে প্রথমে হুঁমকি দামকি দেয়। তাতেও আমাদেরকে এ আন্দোলনে নিতে না পারায় সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমরা সংগঠনটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামে নতুন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। যার মাধ্যমে আমরা কাজ করে যাব। আগামী ২৬ তারিখের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এই সংগঠন স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়েছে। ’
নতুন সংগঠন খোলার কারণে মূল সংগঠনটির উপর কোন প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংগঠন মূলধারার সংগঠন। এর আগেও ভিসি আনোয়ারের সময়ও এমন বিদ্রোহীরা সংগঠন খুলেছিল আমাদের সংগঠনের কিছুই হয়নি। আমাদের সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বর্তমানেও চলছে ভবিষ্যতেও চলবে।’
এদিকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মূল সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ থেকে এ নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, সহ-সভাপতি পদে অধ্যাপক শফি মো. তারেক, যুগ্ম সম্পাদক পদে সহযোগী অধ্যাপক আওলাদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক কবিরুল বাসার ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে সংগঠন থেকে মনোনয়ন পাওয়া আরও ১০ শিক্ষক।
প্রসঙ্গত, গত ১ মাস যাবত উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরপন্থী শিক্ষক ও সিনেটররা। যে সংগঠনটির ব্যানারে আন্দোলন করা হচ্ছে ওই সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান দুই উপ-উপাচার্য।
এমন অবস্থায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃনিয়োগ দেন। এ নিয়োগ দেয়ার পর আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা প্রকাশ্যে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক গ্রুপ উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে সরকার কর্তৃক উপাচার্য হিসেবে পুনঃনিয়োগ দেয়াকে স্বগত জানিয়ে ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন ও আনন্দ শোভাযাত্রা করে। আরেক গ্রুপ ভিসি প্যানেল নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এমন অবস্থায় বিভক্ত আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও হুমকি দমকির কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন