চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ দিনের ব্যবধানে ২ শিক্ষার্থীকে অপহরণ এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়া পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অপহরণ আতঙ্কে ভুগছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া একই শিক্ষার্থীকে বছরের ব্যবধানে ২ বার অপহরণ করার পর পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে না আসার হুমকি দেয়ায় বর্তমানে তার পড়াশুনাও অনেকটা বন্ধের পথে।
এক সপ্তাহে ২ বার অপহরণ ও চাঁদা আদায়ের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
একের পর এক শিক্ষার্থীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটলেও এ নিয়ে চবি প্রশাসন অনেকটা নীরব বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ৪ দিনের ব্যবধানে দুইটি অপহরণের ঘটনা ঘটল। অথচ এখনো কেউ আটক হলো না। আমরা নিজেরা আতঙ্কে ভুগছি কবে না আবার অপহরণের শিকার হই।
বার বার অপহরণও চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটার পেছনে বিশাল পাহাড়ে ঘেরা ক্যাম্পাসে পুলিশের কম উপস্থিতিকেই দায়ী করেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে,ক্যাম্পাসে অপহরণ, ছিনতাইয়ের সাথে যে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই জড়িত তা নয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরের বিশাল একটি চক্র জড়িত।
পর পর দুই দফা অপহরণের শিকার ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মামদুদুর রহমান ব্রেকিংনিউজকে জানান, তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দুই বার অপহৃত হয়ে আল্লাহর রহমতে মুক্তিপণ দিয়ে জান নিয়ে ফিরে এসেছি, এরপর হয়ত আর প্রাণ নিয়ে আসতে পারবো না।’
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তাকে অপহরনণর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘পৌনে তিনটার দিকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে থেকে জিরো পয়েন্ট যাওয়ার জন্য সিএনজি থেকে উঠেছিলাম, হঠাৎ করে একটা ছেলে এসে বলে তোমার সাথে কিছু কথা আছে নেমে আস।সিএনজি থেকে নামতেই কয়েকজন আমাকে অন্য আরেকটা সিএনজিতে উঠিয়ে লেডিস হলের ওই দিকে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর তারা এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।অন্যথায় শিবির বলে পুলিশকে দিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।পরে বাসায় কল দিলে বিকাশের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা পকেটে থাকা ১ হাজার টাকা ও মুঠোফোন রেখে ছেড়ে দেয়। এসময় তারা আর ক্যাম্পাসে না আসতে হুমকি দেয়।’
এর আগে গতবছর মার্চ মাসে প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। পরীক্ষা শেষ করে হলে থেকে বের হওয়ার পর পর কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে কলা অনুষদের ছাদে নিয়ে একইপন্থায় ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়া পায় সে।
পরে সে আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। এবার সে পুনরায় প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা দিতে আসলে নিরাপত্তার অভাবে ৪ টা দিয়ে আর দিতে পারেনি
অপহরণকারীদের সম্পর্কে মামদুদ বলেন, তারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে কোন গ্রুপের তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ৪ দিন পর অপহৃত হন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রাণ রসায়ন বিভাগে ভর্তি হওয়া সাজিদ খান নামে এক শিক্ষার্থী। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাজিদ মেধা ও
মুক্তিযোদ্ধা কোটা-দুই তালিকাতেই উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু ভালো বিষয় পাবে কি না সন্দিহান ছিল। পরে ফেসবুকে ছাত্রলীগের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক অনিক হোসাইন সাব্বিরের সাথে ভালো বিষয়ে পাইয়ে দিবে বলে ২ লক্ষ টাকার চুক্তি করে সাজিদের সাথে।
আর এটা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় করা হবে বলে সাব্বির জানান। কিন্তু চুক্তি হওয়ার আগেই সে ভালো বিষয় পেয়ে যায়।কিন্তু এরপরও টাকা দাবি করে সাব্বির। পরবর্তীতে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হলেও, আরো টাকা দাবি করে। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার আরও ২৫ হাজার টাকা দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাজিদকে অপহরণ করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েরর সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী অপহৃত হয়েছিল।আমরা তাকে উদ্ধার করেছি।বতর্মানে সে সুস্থ আছে।কে বা কারা অপহরণ করেছিলো আমরা তা জানার চেষ্টা করছি।’
বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘ এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ঘটনাগুলোর পর মামলা হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের ব্যাপারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এ চক্রটিকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে।’
এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আতংকিত হওয়ার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন