শিক্ষকদের নিজেদের দ্বন্দ্বে ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর মাধ্যমিক স্কুলের একাংশ বুধবার রীতিমত বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম থেকে বের করে দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই স্কুলে ঠিকমত ক্লাস হয় না, প্রায় দিনই টিফিনে ছুটি দেওয়া হয়, শিক্ষাসফর ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় না, ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক নেই, দরজা-জানালা ভাঙাসহ স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ নেই। এজন্য তারা স্কুলের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে ও প্রধান ফটকে তালা মেরে দিয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিস-উর রহমান শরিফ বৃহস্পতিবার সকালে জানান, এই স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকায় স্থানীয় কাউকে শিক্ষকরা মানতে চায় না। ফলে সমস্যাগুলো ঠিক করা সম্ভব হয় না।
চেয়ারম্যান জানান, বুধবার শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসে একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়ে গেছে। তাতে তারা ঠিকমত ক্লাস হয়না বলে অভিযোগ করেছে। ম্যানেজিং কমিটিতে আমাদের ২ জন ইউপি সদস্য আছেন, তাদের উপর দায়িত্ব দিয়েছি।
এদিকে ঈশ্বরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন শিক্ষক গত ৭-৮ মাস ধরে স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির বেতন ও ফি আদায় করে স্কুলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি অডিটে ধরা পড়লে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের বেতন থেকে এই টাকা কর্তনের চিঠি দেন। এতে তারা কৌশলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে তালা মেরে স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে।
স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন কারণে গত বছর ঈদুল ফিতরের বেতন-বোনাস এখনও পাননি শিক্ষকরা। সে কারণে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। স্কুলে তালা মেরে দেওয়ার বিষয়ে দু’একজন শিক্ষকের মৌন সহযোগিতা থাকতে পারে।
বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষকদের সমস্যার কারণে স্কুল তালা মেরে বন্ধ করে দেয়াটা অযৌক্তিক ও আইনবিরোধী কাজ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার বিষয়টির সমাধানের জন্য সভাপতির ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার ও মাধ্যমিক শিক্ষার একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম স্কুল বন্ধ করে দেওয়া আইনের পরিপন্থী উল্লেখ করে জানান, ওই স্কুলের ৫ জন শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। স্কুলের শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান করতে তাদের দুজন কর্মকর্তা স্কুলে গিয়েও ব্যার্থ হয়েছেন। তাদের বারবার বলা সত্ত্বেও তারা সমাধানের পথে আসেন না। ফলে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন জানান, আমি দুইদিন হলো এই উপজেলায় যোগদান করেছি। এখনও ওই স্কুলের সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না। তবে ঘটনাটি শুনে এরইমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দ্রুত সমস্যার সমাধান করে স্কুল খোলার ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন