রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন, শিক্ষক সমিতিসহ ৭ ক্যাটাগরিতে ৭০ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অধিকাংশ ক্যাটাগরিতে আওয়ামীপন্থী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের (হলুদ প্যানেল) ভরাডুবি হয়েছে।
নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ সব পদের দখল নিয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী 'জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজ (সাদা প্যানেল)।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ১৫০ জন শিক্ষক ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এম এ বারী।
রাত ৮টা পর্যন্ত ৭টি ক্যাটাগিরর মধ্যে ৬টিতে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ ৬টি পদই পেয়েছে সাদা প্যানেল। এর মধ্যে সভাপতি হিসেবে ফাইন্যান্স বিভাগের আমজাদ হোসেন, সহসভাপতি সমাজকর্ম বিভাগের গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক ফার্মেসি বিভাগের মামুনুর রশিদ, সদস্য পদে অর্থনীতি বিভাগের কেবিএম মাহবুবুর রহমান ও ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মামুন-উর-রশীদ খন্দকার নির্বাচিত হয়েছেন।
হলুদ প্যানেল থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে শুধুমাত্র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মারুফ নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৮টি পদ সদস্য হিসেবে পেয়েছেন।
নয়টি অনুষদের ডিন পদে নির্বাচনে আইন অনুষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হয়েছেন হলুদ প্যানেল থেকে আইন বিভাগের অধ্যাপক আহসান কবির। বাকি আটটির চারটি পেয়েছে সাদা প্যানেল এবং চারটি পেয়েছে হলুদ প্যানেল।
সিন্ডিকেট নির্বাচনে পাঁচটি পদের মধ্যে প্রভাষক ক্যাটাগরিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন হলুদ প্যানেলের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের মসিদুল হক। বাকি চারটির মধ্যে তিনটিই পেয়েছে সাদা প্যানেল।
ফাইনান্স এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটিতে দুটি পদেই বিজয়ী হয়েছেন হলুদ প্যানেলের শিক্ষকরা। শিক্ষা পরিষদের দুটি ক্যাটাগরিতে ছয়জনই নির্বাচিত হয়েছেন হলুদ প্যানেল থেকে। রাত ৮টা পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের ফলাফল পাওয়া যায়নি। এটি পেতে দেরি হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার। তবে বেসরকারিভাবে এই ক্যাটাগরির ৩৩টি পদের অধিকাংশতেই সাদা প্যানেলের শিক্ষকরা এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের এই ভরাডুবির পেছনে নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বকেই মূলত দায়ী করেছেন শিক্ষকরা। তাদের মতে, আওয়ামীপন্থী প্রগতিশীল শিক্ষকদের মধ্যে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন গ্রুপের 'শীতল সম্পর্ক' নির্বাচনে এর প্রভাব পড়েছে।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরিস্কারভাবেই হলুদ প্যানেলে থাকা শিক্ষকদের মধ্যে দু'টি গ্রুপ ছিল। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের শিক্ষককে নির্বাচিত না করে বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দিয়েছে। এছাড়া কিছু পদে যোগ্য প্রার্থী দিতে না পারা ও বিদ্রোহী প্রার্থীও একটি কারণ। এর মধ্যে কলা অনুষদে হলুদ প্যানেলের বাইরে থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনও করেছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুজিত সরকার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন