অবশেষে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী মাসে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের পূর্বঘোষিত মৌখিক তারিখ ৩১ মার্চ কাউন্সিল না হওয়ায় কিছুটা অনিশ্চয়তা কাজ করছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতেই সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কাউন্সিলের নতুন তারিখ ঠিক করা হয়েছে আগামী ১১ ও ১২ মে।
ছাত্রলীগের ২৯তম কাউন্সিলের উত্তেজনা শুধু ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মহানগরীর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও কাউন্সিলের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি সাধারণ মানুষের চায়ের কাপেও কাউন্সিলের ঝড় বইছে। সবারই একই চিন্তা, একই প্রশ্ন লবিং-তদবির না যোগ্যতা- কোন মানদণ্ডে ছাত্রলীগের ২৯তম কাউন্সিলে নেতা নির্বাচন করা হবে।
তবে পালের হাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে থাকলেও ইতোমধ্যে মাঠে নেমে শক্ত অবস্থানের জানান দিচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা। আগামী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদ চায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদপ্রত্যাশীরা।
কাউন্সিলের নতুন তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। লবিং-তদবিরে কোনো কাজ হবে না, যোগ্যতার ভিত্তিতেই নেতা নির্বাচন করা হবে- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী নেতাকর্মীরা দিনরাত এক করে আওয়ামী লীগের উচ্চপদস্থ নেতাকর্মীদের মন জয় করতে শুরু করে দিয়েছেন। পিছিয়ে নেই পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
সবশেষ ২০০২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নজরুল ইসলাম বাবু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এর পর কামরুল হাসান রিপন ছাত্রলীগের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কথিত সিন্ডিকেটের ভোটযুদ্ধে হেরে যান। নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের কারণে তার পর আর কেউ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রার্থী পর্যন্ত হতে পারেনি।
পুরাতন কথা বাদ দিয়ে বর্তমান কথায় এলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবদান কম নয়। সেদিনের ১/১১-এর কথা কি প্রধানমন্ত্রী ভুলে গেছেন? অন্যান্য স্থানে কর্মী সংকটের কারণে হাজিরা খাতায় নাম লিখে মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিত জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। উপস্থিতির তালিকায় নাকি চোখে পড়ার মতো ছিল জবি ছাত্রলীগ। হেফাজতে ইসলামের ৫ মেয়ের ঘটনায় জবি ছাত্রলীগ ছাড়া আর কাউকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নাকি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অন্যান্য ইউনিটের নেতাকর্মীদের সংখ্যা যখন প্রায় শূন্যের কোঠায় তখন জগন্নাথ ছাত্রলীগ পুরান ঢাকায় ভ্যানগার্ডের দায়িত্ব পালন করেছে জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
তাই এবারের কাউন্সিলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক সাইফুল্লাহ ইবনে আহমদ সুমন, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সুরঞ্জন ঘোষ, জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল, এক নম্বর সহ-সভাপতি আপেল মাহমুদ, এমএম নাজমুল হাসান ও ও সহ-সভাপতি হাসান আহমেদ খান প্রার্থী হিসেবে তোড়জোড় শুরু করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
পদপ্রত্যাশী নেতারা প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অনেকে ছাত্রলীগের কমিটিতে প্রভাব রাখা সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছেও ধরনা দিচ্ছেন। নেতা নির্বাচন ‘ইলেকশন’ না ‘সিলেকশন’ পদ্ধতিতে হবে, তা নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন কেউ-কেউ।
তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান দেখে নয়, এবারের কাউন্সিলে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। কর্মীবান্ধব হয়ে যোগ্যতার ছাপ রাখতে পারলে জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন