হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ফিসারিজ টেকনলোজি বিভাগের শিক্ষক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ফেরদৌস মেহবুবের বিরুদ্ধে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রী ও জ্যৈষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ডীন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ফিশারিজ অনুষদের ৬ জন সিনিয়র শিক্ষক রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে তার ডীনশীপের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ২ মাস আগে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই তাকে আবার উক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।
জানা গেছে, পিএইসডি ডিগ্রী নিয়ে তিনি বিভিন্ন সূযোগ সুবিদা ভোগ করেন সেই সময় পর্যন্ত তার পিএইসডি সম্পূর্ণ ছিল না। পিএইসডির সার্টিফিকেট প্রদর্শন করার জন্য তাকে বার বার সময় দেয়া হলেও তিনি তা ওই সময় দেখাতে পারেন নি।
অথচ এই পিএইসডি ডিগ্রীর কথা বলে তিনি ডীন হওয়া সহ সরকারি অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন যা পুরোপুরি অবৈধ। আর্থিক সুবিধা সহ যে সুবিধাদি এতোদিন তিনি ভোগ করেছেন সব কিছু তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
কিন্তু গত প্রশাসনের সময়ে তিনি অনেক অনিয়ম করলেও পার পেয়ে গেছেন। তার মধ্যে ২০০৮ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ৪ বছরের ছুটিতে জাপান অবস্থান করেন। সে সময় তিনি পূর্ণ বেতন পান, কিন্তু ৩ বছর জাপানে অবস্থান করে পিএইচডি সম্পূর্ন না করে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তিনি ০১-১০-০৮ থেকে ৩০-০৯-১২ সময় পর্যন্ত ৪ বছরের জন্য পূর্ণ বেতন এবং ০১-১০-২০১৩ হতে ৩০-০৯-১৪ ইং তারিখ পর্যন্ত অর্ধ বেতন ছুটি পাবেন। কিন্তু এর বাহিরেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি ১০-০১-১৪ তারিখ থেকে ০৮-১২ -১৫ পর্যন্ত প্রায় দুই বছর অতিরিক্ত সময় বিদেশে অবস্থান করেন যা বিশ্ববিদ্যালয় বিধির লঙ্ঘন হয়েছে।
এই মর্মে তৎকালীন প্রশাসন কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলেও সাবেক ভিসির প্রিয় পাত্র হওয়ার সুবাদে সেই নোটিশ আলোর মুখ দেখেনি। এমন কি তিনি যে নোটিশের জবাব দিয়েছিলেন তা সন্তোষ জনক না হওয়ায় তৎকালীন প্রশাসন তাকে চাকুরিতে যোগদানের পর পরই পুনরায় কৈয়ফত তলব করার কথা ছিল যা এখন পর্যন্ত প্রশাসনের হতে পৌঁছায়নি।
জানা গেছে, অভিযোক্ত ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর তৎকালীণ সরকারের সময় তিনি ছিলেন বিএনপির তথা সাদা দলের অন্যতম নেতা। তবে তার এতো সব অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তাকে তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন প্রদক্ষেপ না নিয়ে বরং তাকে চেয়ারম্যানের দায়ত্ব দেওয়ার পাশাপাশি প্রফেসর হিসেবে পদন্নোতি প্রদানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উক্ত অনুষদের একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, এখন পর্যন্ত যা হয়েছে তা কোন সাজার মধ্যে পরেনা। উনি দেড় বছর ইনক্রিমেন্ট সহ অনেক সুযোগ সুবিধা নিয়েছে , এটা বড় ধরনের জালিয়াতি কিন্তু সেই টাকা ফিরিয়ে নেয়া কি কোন শাস্তি হলো? চোর চুরি করলে, মালামাল ফেরত নিয়ে চোরকে ছেড়ে দেয়ার মতো অবস্থা কিছুটা। প্রশাসনের উচিৎ তার বিরুদ্ধে ভালোভাবে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।
অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বললে তিনি ক্যাম্পাসলাইভকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রমোশন দেওয়া হয় ম্যাচুরিটির ভিত্তিতে ওনার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। আর যে অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি ব্যবস্থা নিবে , পাশাপাশি তার প্রমোশনের ব্যাপারে গঠিত বোর্ড সিদ্ধান্ত নিবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন