সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র সমাজের তীব্র আন্দোলনের মুখে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এক বক্তৃতায় কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে দেয়ার ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীরা সেসময় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানায়। প্রধানমন্ত্রীকে ‘মাদার অফ এডুকেশন’ উপাধিতেও ভূষিত করা হয়। অথচ মৌখিক ঘোষণার এক মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এই সিদ্ধান্তের সরকারি বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ দেখছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার নিজের একাউন্ট থেকে ফেসবুক লাইভে দেয়া বক্তব্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ন আহ্বায়ক নুরুল হক নুর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার অনুকূলে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে কালক্ষেপণ না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর একমাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে, অথচ প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে না, কেন এমন কালক্ষেপণ করা হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়’।
তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘সাধারণ ছাত্রসমাজকে যদি আবার রাস্তায় নামতে হয় তাহলে পরিণতি কারো জন্যই ভালো হবে না’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে প্রশাসন তৎপরতা চালিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, হলে হলে সাধারণ ছাত্রদেরকে প্রোগ্রামে যেতে বাধ করা যাবে না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারো বাপের টাকায় করা না যে প্রোগ্রামে না গেলে হল থেকে বের করে দেয়া হবে। এটা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় গড়া প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি রিক্সাওয়ালার টাকা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে।
এ সময় তিনি বলেন, সাধারণ ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, তাদেরকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। শকুনের দলেরা তো ভয় দেখাবেই, ভয় দেখিয়ে থামিয়ে করতে পারলে তো তাদের লাভ।
গত বৃহস্পতিবার কবি সুফিয়া কামাল হলের ২০জন ছাত্রীকে গতমাসের একটি ঘটনায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে এপ্রিলের ১০ তারিখ রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফফাত জাহান এশাকে হল প্রসাশনের উপস্থিতিতে জুতার মালা পরিয়ে দেয় হলের সাধারণ ছাত্রীরা। হলের সাধারণ ছাত্রীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এশাকে বহিস্কার করে। পরে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে উভয় বহিস্কারাদেশ তুলে নেয়া হয়, এবং এশাকে ফুলের মালায় বরণ কলে হলে তোলা হয়। এখন ওই ঘটনায় জড়িত রয়েছে বলে দাবি করে প্রশাসন ছাত্রীদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর সাহসী ভূমিকার উদাহরণ দিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা বন্দুকের নলের মাথায় ধরে নিয়ে বন্দি করে রেখেছিল, সেসময় তিনি ভয়ে পিছপা হননি, অতএব আমাদেরকেও ইউনাইটেড থাকতে হবে। ন্যায়ের কথা বলার জন্য সামনে এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও কথা বলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন