বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দিন যত যাচ্ছে অনিয়মের পরিমাণও তত বাড়ছে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ নিয়োগ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।
এর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতি, বিভিন্ন খাত দেখিয়ে সরকারি অর্থ তছরুপ। এ ছাড়া বিধি অনুযায়ী সময়মতো সিন্ডিকেটের মিটিং না ডাকায় প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। সিন্ডিকেটের মিটিং যথাসময়ে না হওয়ায় অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি আটকে আছে। এতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলো ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে বণ্টন না করায় ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের মধ্যেও এক ধরনের ক্ষোভ বাড়ছে।
জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা হয়েছে, প্রতি ৩ মাসে কমপক্ষে একটি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হইবে। কিন্তু গত ৫ মাস হয়েছে কোনো সিন্ডিকেট সভা হয়নি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ৫৫তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর। তারপর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও কোনো সিন্ডিকেটের সভা আহ্বান করেননি উপাচার্য।
জানা গেছে, উপাচার্য বিভিন্ন কারণে ইচ্ছে করেই তিনি সিন্ডিকেটের সভা আহ্বান করছেন না। এর মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে- সর্বশেষ সিন্ডিকেটে যেসব নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে সেই বাতিলকৃতদের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য গবেষণা কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। তার নাম মেহজাবিন এলাহী। ওই নিয়োগের ব্যাপারে আপত্তি করেছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদসহ (সৌরভ সিকদার) আরও কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য। তারা তাদের যুক্তিতে বলেছিলেন, গ্রেড-১ এর চারটিসহ রিসার্স অফিসার পদে নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া উচিত।
সৌরভ সিকদার জানান, তিনি নিজেই ওই সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত থেকে আপত্তি তোলেন। পরে অন্য পদগুলোয় নিয়োগ স্থগিত রাখা হলেও সিন্ডিকেটের অগোচরে রিসার্স অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এর জবাবে উপাচার্য ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, সিন্ডিকেট রিসার্স অফিসার পদে নিয়োগের বিষয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি। গ্রেড-১ পদগুলোয় নিয়োগের ক্ষেত্রে আপত্তি তুলেছিল। তাই সেগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে। এ পদে যোগ্য প্রার্থীকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৫৫তম সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত কোনো টাকা উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু উপাচার্য সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তও মানেননি। তিনি মামলা পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের প্রায় সাত লাখ টাকা উত্তোলন করার জন্য চাহিদা হিসাব শাখায় পাঠিয়েছেন।
সিন্ডিকেট সভা সময়মতো না হওয়ায় যাদের পদোন্নতি আটকে আছে তাদের একজন হলেন সহকারী রেজিস্ট্রার শামসুজ্জামান। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আমার পদোন্নতি অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কি কারণে হচ্ছে না, তা জানতে পারছি না। তিনি বলেন, সবকিছুর স্বাভাবিকতা থাকা উচিত। অস্বাভাবিক কোনো কিছু কেউ কামনা করেন না।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ (সৌরভ সিকদার) গতকাল বলেন, বর্তমান উপাচার্য কোনো নিয়ম-কানুন মানছেন না। আগে এক উপাচার্যও একই রকম কোনো নিয়ম-কানুন মানতেন না। দুর্নীতির দায়ে তিনি জেল খেটেছেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। বর্তমান উপাচার্যও যদি নিয়ম না মানেন তার পরিণতিও আগের উপাচার্যের মতো হওয়া অস্বাভাবিক নয়। যোগ্য লোকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমরা সিন্ডিকেটে ভিসিকে বলেছি। তিনি আমাদের কথা না শুনে একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এটি নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ বলেই আমি মনে করি। আমরা শুনেছি তিনি প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা খেয়েছেন, কিন্তু এর কোনো প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। আমরা বলেছি যদি টাকা না খেয়ে থাকেন তাহলে প্রার্থীকে বাতিল করে দেন, কিন্তু তিনি বাতিল করেননি। এর দ্বারা কি বুঝা যায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন