কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় সারাদেশে চলছে সমালোচনার ঝড়। হামলার সময় কেউ তাদেরকে বাঁচাতে আসেনি বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকেই। তবে ওই সময় আন্দোলনকারীদের পিটানোর সময় একটি কুকুরকে দেখা দেখে। কুকুরটি অনেকক্ষন ঘেউ ঘেউ করে ভয়ে চলে গেছে!
একটি মানুষকে মারছে আর কেউ বাঁচানোর জন্য চেষ্টাও করলো না, অথচ যেই প্রাণীর বিবেক-বুদ্ধি কিছু্ই নেই সেই কুকুরও মারের দৃশ্য দেখে ঘেউ ঘেউ করে উঠলো। আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম।
এদিকে ছাত্রদের এই আন্দোলনে কয়েকটি ঘটনা সারাদেশ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে নুরুল হক নুরুকে ছাত্রলীগের ব্যাপক মারধর, তাকে হাসপাতালে থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা। শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছনার শিকার তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মরিয়ম মান্নান ফারাহ। এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুলকে হাতুড়ি দিয়ে মারধর। এই সবকিছুর মুল কারণ কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপর জারি করা।
এনিয়ে বিশিষ্টজনদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন- সরকার বারবার প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলেও কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করছেন না। তারা তো (আন্দোলনকারীরা) সংবাদ সম্মেলন করে জানতে চেয়েছিল । এটাই তাদের অপরাধ! যার কারণে ছাত্রলীগ দিয়ে তাদেকে এভাবে পেটানোর কি ধরকার ছিল। যারা মার খেলো তাদেরকেই গ্রেফতার করা হলো, তাদেরকেই আসামি করা হলো।
তথ্য মতে, কোটা সংস্কার আন্দোলোনকারীর অনেক নেতা-কর্মী গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের পরিবারকে গুম ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে এই প্রজ্ঞাপর জারি দুই দিনে করতে পারেন আবার চাইলে ছয় মাসেও করতে পারেন। পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। মূল কথা সরকার যখন ইচ্ছে করবেন তখন প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
শেষ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিল, সংরক্ষণ বা সংস্কারের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যর কমিটি গঠন করেছে সরকার। আগামী ১৫ কর্যিদিবসের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।
এ কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধও করছিলেন তারা। গত ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে বসে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু এরপরের দিনও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’
এখনো এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন।
https://www.facebook.com/amiamar13/videos/1736440569778861/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন