কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে কী পেলেন শিক্ষার্থীরা? ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি, বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার, নারী আন্দােলনকারীদের ওপর নির্যাতন সহ বিভিন্ন ঘটনায় অসহায় হয়ে পড়েছে তারা।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আন্দোলন করতে গিয়ে নুরুলদের ওপর যে অত্যাচার করা হয়েছে সেটা অকল্পনীয়। তরিকুলদের যেভাবে হাতুড়ি, রামদা, লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে কোন সভ্য দেশে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। নুরুলকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সরকার বিভিন্নভাবে তাদের পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। একটি স্বাধীন দেশে এ কেমন আচরণ?
এই আন্দোলন নিয়ে শুরু থেকেই লেখক, কলামিস্ট ও ব্লগাররা ব্যাপক লেখা-লেখি করেছেন। তাদের অনেকেই এই আন্দােলনের পক্ষে সায় দিয়েছেন। সরকারে অনেক সিনিয়র নেতারাও এ নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন।
তবে সরকারে বিপক্ষে ও আন্দোলনকারীদের পক্ষে লেখেছেন অনেকেই। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনের মতামত তুলে ধরা হলো। আন্দোনলনকারী নেতা তরিকুলের পায়ের হাড় ভেঙে দেওয়ার প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেছেন, আমি কোনোদিন এক্সরে প্লেট দেখে ধরতে পারিনি, ভাঙাটা কোথায়। কিন্তু এই প্লেটে কী ভীষণভাবে হাড়গুলো ভাঙা। আমার মন ভেঙে গেছে। অযুত নিযুত মানুষের মন ভেঙে গেছে। ভাঙা হাড় হয়তো জোড়া লাগানো যাবে, কিন্তু অযুত মানুষের হৃদয় কি আর জোড়া লাগবে? মানুষ কি মানুষের শরীরে এইভাবে হাতুড়ি চালাতে পারে? মানুষ? মা নু ষ?
মানুষ মানুষ হয়েছে সে হাতিয়ার বা যন্ত্র আবিষ্কার করেছিল বলে। কিন্তু হাতিয়ারের এই ব্যবহার মানুষের ইতিহাসকে পেছনে টানছে। বন থেকে মানুষ একবার গৃহবাসী হয়েছিল, এখন আবার আমরা জঙ্গলে ফিরে যাব? গুটি কয়েক অমানুষের কারণে? মানুষেরা জাগবে না? মানুষের বিবেক জাগবে না? অমানুষেরা ভেঙে চলবে মানুষের মানবিকতা আর মনুষ্যত্ব আর মানুষ-পরিচয়ের হাড়গোড় অস্থিমজ্জা?
লেখক ও ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য বলছেন, ছাত্রলীগ একটা জাতীয় সমস্যা। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার অন্যতম প্রতিবন্ধক। ছাত্রলীগকে রুখে দাঁড়ানো আজকের একটা প্রগতিশীল কর্তব্য।
ডেইলি স্টারে লিখেছেন লেখক ও সাংবাদিক গোলাম মোর্তূজা বলেছেন, যারা পিটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করল- তুলে নিয়ে গেল, কুপিয়ে-পিটিয়ে রক্তাক্ত করল, নারী নিপীড়ন করল, ধর্ষণ-গুমের হুমকি দিল, তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ থেকে গেল। কারণ তারা ছাত্রলীগ। তারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করবে, শহীদ মিনারে ছাত্রী নিপীড়ন করবে, ধর্ষণ করতে চাইবে, ভিসির কার্যালয়ের সামনে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করবে, কিছুই প্রমাণ হবে না। সর্বোচ্চ ধর্ষক সেঞ্চুরিয়ান মানিকের মতো দু’একজনকে হয়ত বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া বলেছেন, কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে বর্তমান ছাত্রলীগ একটি অসভ্য ইতিহাস তৈরি করলো। সরকার ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করছে না।
আহত নুরুল হকের বাবা ইদরিস হাওলাদার বলেছেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে তার ছেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। তাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পেটানো হয়েছে। ছেলের ওপর হামলা হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে আমার ছেলে, কালকে আপনার ছেলে, পরশু দিন তার ছেলে– এভাবেই দেশটা চলবে। আমরা মরে যাবো তারাই বেঁচে থাকবে।’
এসবকিছুর মাঝে যখন বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বললেন, “মুক্তিযোদ্ধা কোটা পরিবর্তন করা যাবে না”। তখন আশার আলো যেন সব নিভে গেলো।
এ নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী গত ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ‘কোটা বাতিল’। বিদেশ থেকে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিক শ্যামল দত্তের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন ‘সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বাতিলই। কিন্তু তারপর এখন আবার বলা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানো যাবে না, ৩০ শতাংশ রাখা হবে। কিছুটা রাখুক আমরাও চাই। কিন্তু ৩০ শতাংশ কোটা রাখার কথা যেভাবে বলা হচ্ছে আমরা মনে করি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। পুরো জাতিকে হতাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর এই কথা।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন