ছেলের বাবা কাজের শেষে বিল থেকে শাপলা ফুলের ঢেপ ফল নিয়ে আসে। ছোট্ট ছেলেটা খুব পছন্দ করে। ঢেপের ভেতরে ছোট ছোট বীজ থাকে।ওই বীজ গুলো নিয়ে ভেঙ্গে রোদে শুকিয়ে খই ভেজে খাওয়া হয় এ খই খুবই সুস্বাদু। কথাগুলো বলছিলেন জেলার মিরপুর উপজেলার মহিষাখোলা গ্রামের গৃহিনী ওলিমা খাতুন। বাড়ি তার বিল এলাকায়।
ঠিক একইভাবে আক্ষেপ করে নদী পাড়ের বাসিন্দা দৌলতপুর উপজেলার গাফতলা গ্রামের নুরু ইসলাম পূর্বপশ্চিমকে বলেন, আগে বাড়ির পাশের হিসনা নদীতে শাপলা ফুল ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যেতো। নদীর পাড়ে বসলে শাপলা ফুল দেখে মনটা আনন্দে ভরে উঠতো। কিন্তু এখন আর খুব একটা দেখা মিলে না শাপলা ফুল এ নদীতে।
কুষ্টিয়ায় জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার মানুষের চিরো চেনা শাপলা। তাই এই আক্ষেপ শুধু ওলিমা খাতুন ও নুরু ইসলামের নয় তাদের মতো কুষ্টিয়ার বিল ও নদী পাড়ের লাখো মানুষের।
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাপলা ফুল বদ্ধ অগভীর জলাশয় জন্ম নেয়। নদী, নালা, খাল, বিল অঞ্চলে শাপলা ফুল জন্মে থাকে। এ দেশে দুই ধরনের শাপলা ফুল দেখা যায়, সাদা ও লাল। শাপলাকে সাদা জল ফল ও লাল শাপলাকে লাল রক্ত জল ফল বলা হয়। শাপলা ফুল যখন আবদ্ধ জলাশয়ে একসঙ্গে অনেকগুলো ফুটে থাকে তখন জলাশয়ে এক অন্যরকম অপরূপ সৌন্দর্য়ের সৃষ্টি করে। আর এ ফুল যখন ফলে রূপান্তরিত হয় তখন তাকে কুষ্টিয়ার স্থানীয় ভাষায় ঢেপ ফল বলা হয়।
তবে পরিবেশবিদরা মনে করেন জলশায়গুলোয় বোরো ধান আবাদ ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করায় শাপলা জন্ম নেওয়ার ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের এক শ্রেণীর মানুষ বিশেষ খাবারের চাহিদা পুরন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, খাদ্য চাহিদার চ্যালেঞ্জ মেটাতে জলশায়গুলো বোরো ধান আবাদে চলে যাচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ করায় শাপলা জন্ম নেওয়ার ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও কুচুরি পানার ফুল সৃষ্টি হওয়ায় নদী,নালা, বিলে তেমন একটা শাপলা ফুল দেখা যাচ্ছে না।
পরিবেশবিদ গৌতম কুমার রায় বলেন, জলের ফল শাপলার পুষ্টিগুণ অনেক। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফলের জন্য মানব্দেহের ঔজ্জ্বল্যতা অটুট থাকে। শরীর ঠান্ডা থাকে। জল তৃষ্ণা মেটে। দেশের এক শ্রেণীর মানুষ বিশেষ খাবারের চাহিদা পুরন করে থাকে এ ফল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন