শীত শেষ হতে না হতেই রাজধানীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। এতে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে শিশুরা। গত বছরের মতো ফের চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মশার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে বাসা-বাড়িতে দিনের বেলাতেও টাঙিয়ে রাখতে হচ্ছে মশারি।
এনিয়ে বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগের কমতি নেই। তাদের অভিযোগ, সময়মতো দেয়া হয় না মশার ওষুধ। অভিযোগের বিষয়টি জানলেও দায়সারা কথা বলছেন এলাকার কাউন্সিলররা।
মশার উপদ্রবের কথা শুনে রাজধানীর লালবাগ, কামরাঙ্গীর চর ও আজিমপুর এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে যান পরিবর্তন ডটকমের সাংবাদিক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সময়মত এলাকাগুলোতে অষুধ ছিটানো হয় না। এমন কিছু এলাকা আছে যেখাতে গত দুই-তিন বছর মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি স্থানীয়রা।
কামরাঙ্গীরচর এলাকার কবরস্থান রোডে ছয় বছর ধরে থাকেন আজগর আলী। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এই এলাকাত এত বছর ধইরা থাকতাছি, মাগার আজ পর্যন্ত আমগো রোডে মশার ওষুধ দিবার দেহি নাই। চৌরাস্তার মোড়ে দিয়া যায়গা। মাগার এদিকে আহে না।’
আজগার আলী ছাড়াও এলাকার বেশ কয়েকজন প্রবীণ জানান, মশার ওষুধ দিলেও গলির ভেতর ওষুধ দেয় না। সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানালেও কোনো কাজ হয় না বলে জানান তারা।
কামরাঙ্গীরচর এলাকার খালপাড় রোডে থাকেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি জানান, খালপাড় হওয়াতে এই এলাকায় মশার উপদ্রব কিছুটা বেশি। এই ব্যাপারে স্থানীয় কমিশনারকে অবহিত করলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
জানতে চাইলে কামরাঙ্গীরচর এলাকার ৫৬ নাম্বার ওয়ার্ড কমিশনার মোহাম্মদ হোসেন পরিবর্তনকে বলেন, ‘আমি আমার এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ দেই। এমন কোনো লোক বলতে পারবে না যে আমি মশার ওষুধ ছিটাই না।’
অভিযোগের উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এমন অভিযোগ করেছেন, তারা হয় আমার এলাকার না নতুবা তারা জামায়াত-শিবিরের লোক। আমাকে হেয় করার জন্য এই অভিযোগ তুলেছে।’
এদিকে লালবাগ এলাকার কিল্লার মোড়ে থাকেন আয়েশা আক্তার। তিনিও জানান এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ দেয়া হয় না। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘প্রয়োজনের সময় কখনোই এই এলাকায় মশার ওষুধ দেয়া হয় না। শীতে মশা না থাকলেও এলাকায় ওষুধ দিয়ে এলাকা অন্ধকার করে ফেলেছিল। কিন্তু এখন মশার উপদ্রব বাড়লেও ওষুধ দেয়া হয় না। মশার কারণে ছোট্ট বাচ্চাকেও সারাদিন মশার নিচে রাখতে হয়।’
রাজা শ্রী নাথ রোডে থাকেন কমল চন্দ্র। মশার উপদ্রবের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই কি আর বলি! দিন নাই রাত নাই সারাদিনই মশা ঘরের মধ্যে ঘুরঘুর করতেই থাকে। একটা মিনিটও শান্তিমতো থাকা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের মশাগুলো ছোট থাকলেও এই মশাগুলোর আকার অনেকটাই বড়। আমরা অনেকে কমিশনারের কাছে গিয়েছিলাম মশা নিধনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলতে। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে কথা দিলেও এখনো কোনো কিছু চোখে পড়েনি।’
লালবাগ শাহী মসজিদে নামাজ শেষ করে বেরিয়ে আসা মুসল্লিরা পরিবর্তন ডটকমকে জানান, মশার উপদ্রবে এখন মসজিদে নামাজ পড়াটাই দায়। নামাজের সময় মশার কামড় সহ্য করা কষ্টকর হয়ে যায়।
মশা নিয়ে এতো অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ এলাকার সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর আলেয়া পারভীন রনজু পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা মেয়র সাহেবের নির্দেশ ছাড়াতো কোনো কাজই করতে পারি না। তিনি যা বলেন, আমাদের তা-ই করতে হয়।’
স্থানীয়দের অভিযোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, কাজ করতে গিয়ে আমাদের কিছু জায়গায় হোঁচট খেতে হয়। সবসময় ওষুধ ছিটাতে না পারলেও মাঝে মাঝে আমরা ওষুধ ছিটাই।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আজ থেকে আমাদের মেয়র সাহেব ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করছেন। ধাপে ধাপে দক্ষিণের সব এলাকাতেই এই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলবে। গরম পুরোপুরি আসতে না আসতেই মশার উপদ্রব এভাবে বেড়ে যাওয়া সত্যিকার অর্থেই লক্ষ্যণীয় বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়াও আমরা দক্ষিণের সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনুরোধ করেছি মশার উপদ্রব কমানোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। সেই সঙ্গে ক্র্যাশ প্রোগামও চলবে। আর ঢাকায় এই মশার উপদ্রব কিভাবে কমানো যায় সেই ব্যাপারেও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
এদিকে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বকুলতলাতে মশক নিধনে দুই সপ্তাহব্যাপী স্পেশাল ক্র্যাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধনকালে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন নিজ বসতবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গত বছর হঠাৎ করে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। ওই সময় ব্যাপক মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি হটলাইন চালু করে নগরবাসীর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বিনামূল্যে ওষুধসহ চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়।’
ডিএসসিসি এলাকায় মশার প্রকোপ তুলনামূলকভাবে অনেক কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারপরও আমরা তৎপর রয়েছি এবং ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন