রোদের তাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
জানুয়ারি মাসে ক্রেতাদের ডেকে ডেকে ডাব বিক্রি করতে হয়েছিল কারওয়ান বাজারের আবদুর রহিমের। দাম কম তা-ও লোকজনের ডাবের পানির জন্য তৃষ্ণা জাগেনি। কারণ তখন শৈত্য প্রবাহ চলছিল। এর পর ফেব্রুয়ারি গড়িয়ে মার্চ এল। শীতকাল বিদায় নিয়ে চলছে বসন্ত। রহিমের এখন হাঁকডাক কম, কথাও কম। কারণ ডাব কাটতে কাটতে তাঁর দম ফেলার ফুসরত নেই। হাতে থাকা চকচকে ধারালো দা দিয়ে একের পর এক ডাব কেটেই চলেছেন। আর ডাবের পানি পান করে তৃষ্ণার্ত ক্রেতাও তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন।
শনিবার দুপুরে দেখা গেল মাঝারি আকারের একটি ডাবের দাম ৫০ টাকা রাখছেন রহিম। এই ডাবের দাম ৫০ টাকা তো বেশি রাখলেন?—প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আর কয়টা দিন যাইতে দেন। গরম পড়লে এই ডাব ৬০ টাকায়ও পাইবেন না।’
আবদুর রহিমের ভবিষ্যৎ বাণী হয়তো সত্যি হতে যাচ্ছে। কারণ তাপমাত্রার পারদ কেবল ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এক মাস আগে ৩ ফেব্রুয়ারি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পটুয়াখালীতে ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৮ দিনের ব্যবধানে গতকাল বাগেরহাটের মোংলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পারদের ঊর্ধ্বমুখী ধারা এতেই থেমে থাকবে না। মার্চ মাসেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর কোনো এলাকায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠে গেলে সেখানে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যায় বলে জানান আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
মার্চ মাসের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, তখন দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। কিন্তু এবার এর চেয়েও ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকতে পারে। এ ছাড়া মার্চ মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে একটি মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং একটি মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
গরমের সঙ্গে সঙ্গে কালবৈশাখীর ঝাপ্টাও আসবে। সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। ১ মার্চ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে জানানো হয়, মার্চে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক-দুই দিন শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি ও তীব্র কালবৈশাখী, বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যান্য এলাকায় ৪-৫ দিন শিলাবৃষ্টিসহ হালকা অথবা মাঝারি কালবৈশাখী, বজ্র-ঝড় হতে পারে। এ ছাড়া মার্চ মাসে দেশের ৮টি বিভাগে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। তবে সিলেট বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ১১০ থেকে ১৩০ মিলিমিটার।
তীব্র গরমে কাকও অতিষ্ঠ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
তীব্র গরমে কাকও অতিষ্ঠ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
শীতে যেতেই কেন এত গরম পড়বে?—এ প্রশ্নের উত্তরে আবহাওয়াবিদেরা জানান, শীতকালে সূর্য কিরণ বাংলাদেশের দক্ষিণ দিক থেকে পড়ে থাকে। তখন দিন ছোট থাকে, রাত হয় দীর্ঘ। ২২ ডিসেম্বর থেকে সূর্য কিরণ উত্তর দিকে থেকে পড়তে শুরু করে। উত্তরায়ণের জন্য মার্চ থেকে মে মাসে সূর্য কিরণ সরাসরি এ দেশের ওপরে পড়ে। এই তিন মাস সময়কে গ্রীষ্ম মৌসুম বলা হয়। এর মধ্যে এপ্রিল মাসে সূর্য কিরণের তেজের জন্য ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত থাকে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে সূর্যের কিরণ দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত বেশি তির্যকভাবে পড়ে। এর সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস বয়ে আসে। এই বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। এর সঙ্গে আরব সাগরের দিক থেকে আসা বাতাসেও থাকে জলীয় বাষ্প। সে কারণে রাজশাহী, রংপুরের মতো উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা কিছুটা কম পড়ে। তবে সাগর থেকে আসা বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল অঞ্চলে অস্বস্তি বেশি অনুভূত হয়।
আবুল কালাম মল্লিক আরও বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা বাতাস মিশে গেলে কালবৈশাখী ঝড়, বজ্র মেঘ, শিলা বৃষ্টি হয়। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের দিকে কালবৈশাখী বেশি হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন