পরিবেশবাদীদের প্রবল আন্দোলনের পর এদেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাবেক চারদলীয় জোট সরকার। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শুধু নিষিদ্ধ পলিথিনই আবার ফিরেনি, নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে টিস্যু ব্যাগ। এটাও মাটিতে মেশে না। পলিথিনের মতই পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করে। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হলেও সরকার এতে কর্ণপাত করছে না।
পরিবেশবাদীরা শুরু থেকেই জোর গলায় দাবি করছেন, এই টিস্যু ব্যাগ পরিবেশ দূষণের নতুন হাতিয়ার ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ এটা পলিথিনের মতো সহজে মাটিতে মিশে যায় না। এটা কাপড়ও নয়।
জানা যায়, ওভেন পলি প্রোপাইলিন দিয়ে প্লাস্টিক পণ্য তৈরির পাশাপাশি টিস্যু ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। বিভিন্ন রঙের ও মোটা হওয়ায় অনেকেই কাপড়ের বুঝে ব্যবহার করায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে টিস্যু ব্যাগের ব্যবহার। বর্তমানে গ্রামেগঞ্জেও টিস্যুব্যাগ তৈরির কারখানা গড়ে উঠছে।
রাজধানীর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ফ্যাশন হাউজ, কাপড়ের দোকান, জুতা কোম্পানি, মোবাইল ফোন কোম্পানি, বিভিন্ন নাম করা কোম্পানি বিভিন্ন রঙের টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার করছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শোরুমে যোগাযোগ করলেও টিস্যু ব্যাগ উৎপাদনকারীদের নাম ঠিকানা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে।
সূত্র জানায়, চীন, কোরিয়া থেকে ম্যাটাডোর গ্রুপ, জারা গ্রুপ, গ্লোবাল নন ওভেন ফেব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এবি ওভেন ব্যাগ ফ্যাক্টরি, হাজী নন ওভেন ব্যাগ ফ্যাক্টরি, এশিয়া গ্রুপ, শিমুরা গ্রুপ, মক্কা প্লাস্টিক কোম্পানিসহ বেশ কিছু কোম্পানি বন্ড লাইসেন্স নিয়ে পলি প্রোপাইলিন আমদানি করছে। বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে কোনো পণ্য আমদানি করলে সে পণ্য থেকে উৎপাদিত মালামাল বিদেশে রপ্তানি পণ্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। আইন অনুযায়ী, দেশের ভেতরে কোনো বিপণন নিষিদ্ধ হলেও গোপনে টিস্যু ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বৈধভাবে আমদানি করা এ পলি প্রোপাইলিন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি বেআইনিভাবে টিস্যু ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। নিষিদ্ধ পলিথিন হলেও এ ব্যাগটি কাপড়ের বলে বিক্রি করা হচ্ছে। দেখতে কাপড়ের মতো মনে হলেও আগুন দিলে গলে যায়। টিস্যু কাপড়ের হলে সেলাই করা থাকত, কিন্তু এ ব্যাগে কোনো সেলাই নেই, তা তাপ প্রয়োগ করে চাপ দিয়ে আটকে দেয়া হয়। সাধারণ মানুষ না জেনে ব্যবহার করেছে পরিবেশের ক্ষতি করছে।
বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী বায়জীদ কবির বলেন, টিস্যু ব্যাগে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। টিস্যু ব্যাগ আগুন লাগলে গলে যায় এবং মাটিতে পচবে না। এ ব্যাগও পলিথিনের মতো নিষিদ্ধ করা উচিত।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বিগত ২০০২ সালে পলিথিন নিষিদ্ধের আইন দেশের জনগণ সানন্দে গ্রহণ করে। তা বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে বর্তমানে আইনটি কার্যকর হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কোনো কার্যকর তৎপরতা এবং মনিটরিং না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিন এবং টিস্যু ব্যাগে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাক্তন অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, বন্ড লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানি করা পলি প্রোপাইলিন দিয়ে টিস্যু ব্যাগ (চায়না টিস্যু ব্যাগ) তৈরি করা হয়েছে। টিস্যু ব্যাগ মাটির নিচে দীর্ঘদিন রাখলেও পচবে না। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। পলিথিনের মতো টিস্যু ব্যাগ নিষিদ্ধ করা উচিত।
তিনি বলেন, টিস্যু ব্যাগের উৎপাদন ব্যবহার রোধে এর কাঁচামাল আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করলে টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার কমে যাবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন