শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহাঅষ্টমী। মহাঅষ্টমী পূজার মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা । মহাঅষ্টমীতে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
অষ্টমী পূজা সকাল সাড়ে ৬টায় ও কুমারী পূজা বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে শুরু হবে সন্ধিপূজা।
কুমারী পূজা প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, সব স্ত্রীলোক ভগবতীর একেকটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পূতঃপবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি। দেবী পুরাণেও কুমারী পূজার সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে কুমারী পূজা র মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়।
এছাড়াও নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময় স্বাভাবিক জীবনযাপন, আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে। শাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করা হয়।
ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজার বিধান শাস্ত্রে রয়েছে। বয়স ভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী কন্যাকে অজাতপুষ্পবালা কুমারী বলা হয়। বয়স অনুযায়ী তার নাম বদলে যায়।
এক বছর বয়সের কন্যাকে সন্ধ্যা, দুই বছর বয়সীকে সরস্বতী, তিন বছর বয়সীকে ত্রিধামূর্তি, চার বছর বয়সীকে কালিকা, পাঁচ বছর বয়সীকে সুভগা, ছয় বছর বয়সীকে উমা, সাত বছর বয়সীকে মালিনী, আট বছর বয়সীকে কুব্জিকা, নয় বছর বয়সীকে অপরাজিতা, ১০ বছর বয়সীকে কালসন্ধর্ভা, ১১ বছর বয়সীকে রুদ্রানী, ১২ বছর বয়সীকে ভৈরবী, ১৩ বছর বয়সীকে মহালক্ষ্মী, ১৪ বছর বয়সীকে পীঠনায়িকা, ১৫ বছর বয়সীকে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ১৬ বছর বয়সীকে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে।
বুধবার ছিল দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন, মহাসপ্তমী।
সারা দেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে মহাসপ্তমী। নবপত্রিকা স্থাপনের মধ্য দিয়ে মহাশক্তি আনন্দময়ীর পূজা শুরু হয়। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপচারে অর্থাৎ ষোলোটি উপাদানে দেবীর পূজা হয়। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করেন ভক্তরা।
সকালে পূজা শুরু হলেও দুপুরের পর থেকে মণ্ডপগুলোতে ঢল নামে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, সব ধর্মের দর্শনার্থীরাই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন। পূজাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মেলায়ও ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরাও নগরীর বিভন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন।
বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতি রামকৃষ্ণ মিশনে যান। এ সময় মিশনের দু’পাশের রাস্তায় ভক্তদের ভিড় ছিল চোখেপড়ার মতো। রাষ্ট্রপতি চলে যাওয়ার পর পুরো এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকাল থেকে সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, আনসারের পাশাপাশি অন্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
ছিল র্যাব সদস্যদেরও কড়া প্রহরা। দর্শনার্থী ও পূজারীদের ব্যাপক ভিড়ে টিকাটুলী, ইত্তেফাক মোড়সহ ওই এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। মোড় থেকে হেঁটে ভক্তরা কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে সুশৃঙ্খলভাবেই পূজামণ্ডপে প্রবেশ করেন। বিকাল সোয়া ৪টার পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। মন্দিরের সামনে শত শত ভক্তকে ছবি ও সেলফি তুলতে দেখা গেছে।
বুধবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রামকৃষ্ণ মিশন মন্দিরে এবার প্রতিমায় কিছুটা ভিন্ন রূপ পেয়েছে। অসাধারণভাবে সাজানো হয়েছে প্রতিমাগুলো। নির্ধারিত মঞ্চে বসানো প্রতিমাগুলোয় আধুনিকতার ছোঁয়া স্পষ্ট। প্রতিমা বসানো মঞ্চের পেছনে আঁকা হয়েছে আলপনা। প্রতিটি প্রতিমায় আলোকসজ্জার কারণে ভিন্ন ভিন্ন রং চোখে ভেসে আসে।
দর্শন করতে আসা পূজারীদের আশীর্বাদ করেন পুরহিত ব্রক্ষ্মচারী গুনেশচৈতন্য। এ সময় তিনি যুগান্তরকে জানান, মা দুর্গাকে এমনভাবে পূজা করছি যাতে তিনি (দুর্গা) আমাদের সবার অশুভকে শুভতে পরিণত করেন। সবার মাঝে যেন তিনি শান্তি দান করেন। মন্দির প্রাঙ্গণে বইয়ের একটি দোকানও রয়েছে। যেখানে দেশি-বিদেশি ধর্মীয় বই বিক্রি হচ্ছে। পাশেই রয়েছে ক্লিনিক, যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন