কেনিয়ার ‘হোমা বে’ শহরের চার্চের বিশপ ইসলামের পতাকাতলে যোগ দিয়েছেন। তার নিজের প্রতিষ্ঠিত চার্চে খ্রিস্টান নারীদের অশোভন পোশাক পরিধান তাকে ইসলামের পথে ধাবিত করেছে বলে তিনি জানান।
পূর্ব আফ্রিকার ‘গড’স কল’ নামের ওই চার্চের বিশপ চার্লস ওকাওয়ানি জানান, তিনি তার চার্চে নারীদের অশোভন পোশাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেননি।
তিনি এখন তার চার্চকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছেন।
কেনিয়ার দৈনিক সংবাদমাধ্যম ‘নাইরোবিয়ান’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মুসলিমদের তুলনায় অধিকাংশ খ্রিস্টানই ‘অনৈতিক ও ভণ্ড’।
ওকাওয়ানি বলেন, ‘আমার চার্চটি পূর্ব আফ্রিকার ‘নিয়ালগোসি গড’স কল’ চার্চ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে এটির নাম ‘নিয়ালগোসি জামিয়া মসজিদ।’
৬৫ বছর বয়সী ওই বিশপ ইসলামিক নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য নিজের নাম কিছুটা পরিবর্তন করে ইসমাইল ওকাওয়ানি রেখেছেন।
ওকাওয়ানি বলেন, ‘বিশপ হিসাবে আমার মেয়াদকালে, আমি ঈশ্বরের বাণী প্রচারের জন্য মালিঙ্গি, মোম্বাসা, নাইরোবি ও তানজানিয়া ভ্রমণ করি। আমি এসব এলাকায় বসবাসরত খ্রিস্টান ও মুসলমানদের আচরণ সম্পর্কে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিলাম এবং এটি আমাকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত করেছিল যে ইসলামই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম।’
‘পোশাক নিয়ে বাইবেলের শিক্ষার নিরুৎসাহিত ধরনই সম্ভবত চার্চের যৌন বাসনাকে অনুপ্রাণিত করে। তবে এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, কিছু নারী মিনিস্কার্ট এবং এ ধরনের আরো কিছু জামাকাপড় পরেন; যা তাদের ব্যক্তিগত গোপন অঙ্গসমূহকে প্রকাশ করে।’ ওকাওয়ানি বলেন।
তার মতে, অশোভন পোশাক পরা মহিলাদের কারণেই চার্চের যাজকেরা প্রলুব্ধ হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, আমি যখন অশোভন পোশাক পরাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করতাম, তখন কিছু মানুষ মনে করত আমি ভুলের মধ্য ছিলাম।’
‘কিসি’ প্রদেশের একজন মুসলিম নেতাকে ওকাওয়ানি তার মনোবাসনার কথা প্রকাশ পর থেকেই তার ইসলামের যাত্রা শুরু হয়।
মোস্তফা সাওক নামে একজন ইমামকে তার মুসলিম হওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।
চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ওকাওয়ানি ইসলামে ধর্মান্তরিত হন এবং ওই চার্চের আর ২৩ জন সদস্য তার সঙ্গে যোগ দেন।
৩০ জন নতুন মুসলমান যোগ হওয়ায় বর্তমানে মসজিদটির সদস্য সংখ্যা ৬৩ জন। নতুন যোগ দেয়া সদস্যরা ‘কাগান’ ওয়ার্ডে তাদের সদস্যপদ নিবন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওকাওয়ানি এখন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত ধর্মীয় প্রশিক্ষণ নেয়ার চেষ্টা করছেন; যাতে তিনি আল্লাহর বাণী প্রচার করতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমাকে এখন ইসলাম ধর্মের ধর্মতাত্ত্বিক প্রশিক্ষণের জন্য যেতে হবে যাতে আমি আল্লাহর বাণী প্রচারের জন্য সক্ষম হই। আমি কখনোই ধর্মতত্ত্ব শ্রেণিতে যোগদান করিনি কিন্তু এখন এটি হবে আমার স্টারটিং পয়েন্ট।’
‘নিয়ানজা’ অঞ্চলের শেখ ওমর আল বশির জানান, তিনটি উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে একটি চার্চকে মসজিদে পরিণত করা যায়।
বশির বলেন, ‘প্রথমত, যখন কোনো চার্চের মালিক খ্রিস্ট ধর্ম ছেড়ে মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং চার্চকে ইসলাম ধর্মের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। দ্বিতীয়ত, মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক চার্চ ক্রয় করার মাধ্যমে এবং তৃতীয় উপায় হল যখন মুসলিম সম্প্রদায় এমন জমি কিনে নেয় যেখানে কোন চার্চ বিদ্যমান থাকে। পরে সেখানে তারা মসজিদ নির্মাণ করতে পারে।’
তিনি জানান, তারা আগামী মাসে মসজিদটির নিবন্ধন করতে যাচ্ছেন।
বশির বলেন, ‘ওকাওয়ানি এবং তার প্রাক্তন চার্চের গুরুজনেরা এটির বিস্তারিত নিবন্ধন করেছে। আমরা আগামী মাসে নিবন্ধনের বিবরণ পরিবর্তন করতে যাচ্ছি; যাতে মসজিদটি যথাযথভাবে নিবন্ধিত হয়।’
তিনি ওই এলাকায় বসবাসরত অন্যান্য খ্রিস্টানদেরকেও ইসলামে যোগদান করার জন্য আহ্বান জানান।
মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান আসমান ওগৌদিনী জানান, তারা মসজিদের জন্য প্রয়োজনীয় মান বজায় রাখতে এটির পুর্ননির্মাণ করতে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সম্পদ সংগ্রহ করছি এবং প্রয়োজনীয় মান পূরণ করতে শিগগিরই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে।’
এসডিই অবলম্বনে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন