প্রশ্ন : চিকিৎসাশাস্ত্রের চরম উৎকর্ষের এই যুগে মানুষ এমন অনেক কিছু করছে যা আগে কেউ কল্পনা করেনি। অপারেশন করে মানুষ নিজের চেহারা পরিবর্তন করছে। চেহারায় এ ধরনের পরিবর্তন কি ইসলামে বৈধ?
.
উত্তর : সৌন্দর্যবর্ধন ও ফ্যাশনদুরস্ত হতে অনেকেই প্লাস্টিক সার্জারি করে পালটে নিচ্ছেন মুখমণ্ডল ও শরীরের গঠন। আবার শারীরিক ত্রুটি নিরাময়েও অনেকে প্লাস্টিক সার্জারি অপারেশনের আশ্রয় নিচ্ছেন। সহজ ভাষায় শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে শরীরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনাই হচ্ছে প্লাস্টিক সার্জারি। এর সাহায্যে দুর্ঘটনায় বা জন্মগত কোনো বিকৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাইরের চেহারা বদলানো যায় এবং শারীরিক কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়। ইসলামে প্লাস্টিক সার্জারির ব্যাপারে রয়েছে কিছু দিকনির্দেশনা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ ধরনের সার্জারিকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক. প্লাস্টিক সার্জারি (plastic sugery)। দুই. কসমেটিক সার্জারি (cosmetic surgery)। তবে এ দুটিকে মৌলিকভাবে প্লাস্টিক সার্জারি অপারেশন বলা হয়।
প্রয়োজনীয় শারীরিক ত্রুটি সারাতে যে সার্জারি করা হয় একে প্লাস্টিক সার্জারি বলা হয়। ইসলাম এটাকে অনুমোদন দিয়েছে। যেমন, পোড়া বা আঘাতজনিত ক্ষত সারিয়ে তোলা, ক্যান্সারাক্রান্ত অঙ্গ বা টিউমার অপসারণের পর ক্ষতস্থানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা, অথবা ঠোঁটকাটা, তালুকাটা, অতিরিক্ত আঙ্গুল বা অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি দূর করা।
একাধিক হাদিস থেকে এ ধরনের অপারেশন বা সার্জারির অনুমতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
‘আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তোমাদের চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে শিঙ্গা লাগানোই সবচেয়ে উত্তম চিকিৎসা।’ (তিরমিজি : ২০৪৯)।
ফকিহগণ বলেন, এর দ্বারা সার্জারির অনুমতি বোঝা যায়। কেননা শিঙ্গা লাগানোর পূর্বে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে অপারেশনে বড় অস্ত্রোপচার হয় আর শিঙ্গার অস্ত্রোপচার ছোট হয়। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা, মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, পৃ ১৪০)
আরেকটি হাদিসে এসেছে- ‘সাহাবি আরফাজা বিন আসয়াদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)র নাক কুলাব যুদ্ধে কেটে যায় । তাই তিনি রূপার একটি কৃত্রিম নাক বানিয়ে নেন। কিন্তু এতে দুর্গন্ধ দেখা দেয়। পরে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আদেশে একটি স্বর্ণের নাক বানিয়ে নেন।’ (আবু দাউদ : ৪২২৬)
এসব হাদিস পর্যালোচনা করলে প্রয়োজনীয় শারীরিক ত্রুটি সারাতে সার্জারি করার বৈধতা বোঝা যায় । (৪/১৯৫ তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম , আল্লামা তাকী উসমানী )
সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও নিজেকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য যে সার্জারি করা হয় তাকে কসমেটিক সার্জারি বলে। যেমন- নাক, চিবুক, ঠোঁট, চোখের পাতা, কান, স্তন এসব অঙ্গের সার্জারি করে আকর্ষণীয় করে তোলা। ইসলাম এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে উত্তম অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা ত্বিন : ৪)।
এরপরও নিজেকে অনাকর্ষণীয় মনে করে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধিত করা হারাম।
কুরআনে এটাকে শয়তানের কর্ম বলা হয়েছে- ‘শয়তান বলল- আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।’ (সূরা নিসা : ১১৮-১১৯)
হাদিসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই নারীর ওপর অভিশাপ দিয়েছেন যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল সংযোজন করে বা নিজ মাথায় চুল সংযোজন করায় । আর যে নিজের শরীরে উল্কি আঁকে বা অন্যকে আঁকিয়ে দিতে বলে।’ (সহিহ বুখারি : ৫৯৩৭ )
এ সমস্ত আয়াত ও হাদিসের দিকে লক্ষ্য করে আল্লামা তাকী উসমানি বলেন, মোটকথা দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও তা স্থায়ী করার লক্ষ্যে এমনভাবে অপারেশনের মাধ্যমে সংযোজন বিয়োজন করা যা দেখলে মনে হয় এটা সৃষ্টিগতভাবেই এমন; তাহলে এটা নিষিদ্ধ। তবে মহিলারা তাদের হাত ও ঠোঁট ও গণ্ডদেশ লাল করে যে সাজসজ্জা করে তাতে মূল সৃষ্টি মৌলিকভাবে বিকৃত হয় না বিধায় তা জায়েজ।’ (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/১৯৫)
মুফতি মাহফুজ তানিম মাহফুজের লেখার আলোকে গ্রন্থনা পরিবর্তন ডেস্ক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন