লেখার শীর নাম হতে পারতো রহিঙ্গা সমস্যার শেষ কথায়? কিন্তু কেন আমি রহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছি? সেটাই বলবো। তার আগে কেন আমি রহিঙ্গাদের এথনিক ক্লিনজিংকে রলিজিয়াস ক্লিন্জিং বলছি তারও একটা নাতিদীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন আছে মনেকরি।
আমরা দেখছি চীন রহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগত ও রলিজিয়াস ক্লিনজিংএ সহানুভূতিশীল হবার পরিবর্তে এই আতীব নিষ্ঠুর ও পৈচাশিক কাজে মিয়ানমারের পক্ষে থেকেছে সমর্থন ব্যক্ত করেছে। কেন? কারণ চীন আতীতে বৌদ্ধ ধর্মানুসারী জাতি ছিল। কম্যুনিজমকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহনের পরে চীনে ৫ টি ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়ঃ
The government formally recognises five religions: Buddhism, Taoism, Islam, Protestantism, and Catholicism (though the Chinese Catholic Church is independent of the Catholic Church in Rome).
চীনের রহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে সমর্থন দেয়ার পিছনে যে কারণ গুলো ক্রিয়াশীলঃ
১। চীনের সাথে মিয়ানমারের স্হল সীমান্ত বিদ্যমান ।
২। মিয়ানমারের ব্লু ইকোনোমিতে অংশিদারিত্বের প্রশ্ন।
৩। চীন সীমান্তে চীনা বংশোদ্ভূত মানুষদের স্বার্থ সংরক্ষন।
৪। চীনের রোড বেল্ট পলিসির বাস্তবায়নের প্রয়োজনে ।
৫। ভরতের বিপক্ষে মিয়ানমারের অবস্হানকে ব্যবহার করা।
৬। চীন আসলে বৌদ্ধ কালচার দ্বারা প্রভাবিত একটি দেশ। এদিক থেকে চীন ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সাথে সুদুর প্রসারী সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশলগত প্রয়াসের কারণে।
৭। জিন্জিয়াং এ উইঘোর মুসলমানদের স্বাধিকার আন্দোলনের বিপক্ষ অবস্থানের প্রতিক্রিয়া হিসাবে একটি কঠিন মেসেজ দেয়ার জন্য।
৮। স্হল পথে চীনকে বাংলাদেশে আসতে হলে মিয়ানমার হয়েই আসতে হবে সেদিক বিবেচনা করে।
ভারত নিজের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেঃ
১। চীনের দক্ষিণমূখি সম্প্রসারণ ও মুক্তামালার ঘেরাও থেকে নিজেকে বাঁচাতে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে।
২। সাথে আমেরিকার সম্প্রসারিত স্বার্থের রক্ষক হিসাবেও ভারত মিয়ানমারের রহিঙ্গা নিধনের মতো অতীব নিষ্ঠুর ও পৈচাশিক কাজে মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়েছে ।
৩। নিজ দেশের হিন্দুত্ববাদীদের সমর্থন পাকা করে ভোটের বাক্স বিজেপির দিকে টানতে রহিঙ্গা মুসলমানদের রক্তকে ব্যবহার করতে।
৪। রহিঙ্গা মুসলমানদের রলিজিয়াস ক্লিনজিংকে টেষ্ট কেস হিসাবে নিয়ে ভবিষ্যতে পশ্চিম বাংলা আসাম ও ত্রিপুরার বাংলা ভাষী মুসলমানদের সুযোগমতো বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাতে।
৫। মিয়ানমারের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে যা ভারত ইতিমধ্যেই হয়েছে।
রাশিয়ার মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন ঠিক ছাগলের ৩ নম্বর বাচ্চার মতো। যেখানে চীন এবং আমেরিকা সেখানে রাশিয়াকে থাকতে হবে। তদুপরি রাশিয়া নিজের পেটের মধ্যে চেচনিয়া ইঙ্গুসেটিয়া এবং দাগেস্তান নিয়ে সমস্যার মধ্যে আছেঃ
১। রহিঙ্গা নিধনে মিয়ানমারেরকে সমর্থন দিয়ে রাশিয়া নিজ দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে নিয়োজিত মুসলমানদের একটা কড়া মেসেস দিতে চেয়েছে।
১। মিয়ানমারে বিশ্বের শক্তিধরদের টানাপোড়েনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে একধরনের গোলে হরিবোল দিয়ে মিয়ানমারে নিজেকে অপরিহার্য করার মানসে ।
সবশেষে আমার মনে হয়েছে আমেরিকা তালেবানদের দ্বারা চীনের পশ্চিম সীমান্তের দক্ষিণে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করে চীনের দক্ষিণমূখি সম্প্রসারণে বহুমাত্রিক বাধা সৃষ্টিতে যেমন সক্ষম হয়েছে তেমনি চীনের পূর্ব সীমান্তের দক্ষিণে মিয়ানমারের রহিঙ্গাদের ও বাংলাদেশকে ব্যবহার করে রাখাইন স্টেট ও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে নব্য আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে চীনের দক্ষিণমূখি সম্প্রসারণ রোধ করতে চায়। বিশেষ করে বঙ্গপসাগরে।
অতীতে রহিঙ্গাদের মিয়ানমার বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়ে ছিল এবং তারা ফিরেও গিয়েছিল। পরে রহিঙ্গারা আবারো নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আর ফিরে যায়নি। ৫ লাখের মতো রহিঙ্গা বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে থেকে যায়। এবারে ৪ লক্ষের অধিক রহিঙ্গা অতীব নিষ্ঠুর জাতিগত ও ধর্মগত নির্মূলকরণের শিকারে পরিণত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রহিঙ্গাদের অতীতের বাংলাদেশে আসা আর এবারে আসার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ পরিলক্ষিত হয়ঃ
১। অতীতে রহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ জাতিগত ও ধর্মীয় নির্মূলকরণের অংশ ছিলনা।
২। এবারে রহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঘটেছে জাতিগত ও ধর্মীয় নির্মূলকরণের অংশ হিসেবে।
৩। অতীতে রহিঙ্গাদের বিতাড়নে মিয়ানমারের প্রতি বিশ্ব শক্তির সমর্থন এবং সায় ছিলনা।
৪। এবারেই প্রথম মিয়ানমার কতৃক একটি জাতিগত ও ধর্মীয় নির্মূল করনের যুদ্ধপরাধের মতো গর্হিত অপরাধের প্রতি বিশ্ব শক্তি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করলো।
বিশ্ব শক্তির এই ব্যতিক্রমী অবস্থানকে গভীর মনোনিবেশ সহকারে বিশ্লেষণের সময় এসেছে। বাংলাদেশকে একটা বিষয় বুঝতে হবে যারা জাতিসংঘে বসে রহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরতে সহায়তা করবে তারাই যখন যুদ্ধাপরাধী মিয়ানমারের পক্ষ নেয় তখন যারা রহিঙ্গাদের দেশে ফিরে যাবার ব্যাপারে কুটনৈতিক পদক্ষেপের সাফল্য কামনা করেন তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কি করার আছে!
রহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যাবার অধিকার সংরক্ষণ করে। ফিরতে না পারলে কি হবেঃ
১। রহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে ফিরতে না পারলে তাদের মাঝে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা দিনকে দিন প্রবল থেকে প্রবলতর হবে।
২। বাংলাদেশ রহিঙ্গাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান ও কার্যকরী সমর্থন নাদিলে দেশী বিদেশী মদদপুষ্ট জঙ্গী সংগঠন রহিঙ্গাদের গোপনে প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গী সন্ত্রাসীতে রুপান্তরিত করে বাংলাদেশ ও মায়ানমারসহ সম্পূর্ণ স্বর্ণতৃভূজকে চরমভাবে অস্হতিশীল করে ফেলবে যার ছোবল থেকে চীন ও ভারত রক্ষা পাবেনা। স্বর্ণতৃভূজের এই সংঘাতের শেষ যবনিকিপাত হবে উওর পূর্ব ভারতকে নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে একটি মিনি বিশ্ব যুদ্ধ দিয়ে যার প্রাথমিক প্রতিযোগিতা আমি লক্ষ্য করছি মিয়ানমারে বিশ্ব শক্তির উপস্হিতীর মধ্যে। এর কিছুটা বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখলাম ভুটানের ডোকলামে।
এই অবস্হায় বাংলাদেশের করণীয় কি?
১। বাংলাদেশ যদি রহিঙ্গাদের পরবর্তীতে পশ্চিম বাংলা আসাম এবং ত্রিপুরার বাংলা ভাষী মুসলমানদের চীর দিনের জন্য গ্রহন করে সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহনকারী স্বাধীনতাকামী মুসলমানরা জঙ্গীবাদে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশকে নব্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পরিনত করবে যার অপেক্ষা চীন বাদে অন্য বিশ্ব শক্তি গুলো করছে এমন ধারনা হয়।
২। সময় নষ্ট নাকরে রহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে বাংলাদেশের উচিৎ চীনের সাথে বসে গভীর আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে উপণীত হওয়া।
৩। বাংলাদেশের সব প্রচেষ্টা বিফলে গেলে বিশ্ব রহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার সমস্যাকে ভূলে গেলে এবং রহিঙ্গারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় পরিণত হলে নিজ দেশের অস্তিত্ব রক্ষার নিমিত্তে বাংলাদেশের উচিৎ হবে ২ লক্ষ কিংবা ততোধিক রহিঙ্গাকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা দিয়ে রহিঙ্গাদের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান ও দৃঢ় সমর্থন দিয়ে রহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন