মিনার রশীদ
হলুদ সাংবাদিকতা , এমবেডেড বা অনুবিদ্ধ সাংবাদিকতার পর নতুন কিছিমের এক সাংবাদিকতার জন্ম হতে চলেছে । এর নাম সংবিধিবদ্ধ সাংবাদিকতা ।
আমরা দেখেছি সিগারেটের প্যাকেটের উপর সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ লেখা থাকে । সিগারেট কোম্পানী পছন্দ করুক আর না করুক এই সতর্কীকরণটি উল্লেখ করতেই হবে ।
একই ভাবে এদেশের পত্রপত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলে ' সংবিধিবদ্ধ সাংবাদিকতা ' চালু হয়ে গেছে । বিষয়টি সংবাদ পত্রের স্বাধীনতাকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে । প্রতিটা সংবাদ মাধ্যমেই যে কোনও বিষয়ের উপর একই ধরণের বর্ণনা থাকে । সেই বর্ণনাটি আবার সরকারী বর্ণনার কাছাকাছি থাকে ।
আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত Khalij Times বৈশ্বিক মানে কোন পর্যায়ে পড়ে তা সচেতন পাঠকদের জানা রয়েছে ।
এই পত্রিকারটির সম্পাদক , সাংবাদিক ও কলাকুশলীদের অধিকাংশই ইন্ডিয়ান নাগরিক । মূল পত্রিকাটিতে নয় , এর ব্লগে একটি লেখা প্রকাশ করেছেন Allan Jacob নামের স্বল্প পরিচিত একজন সাংবাদিক । লেখাটির শিরোনাম , Hasina knows the Art of Compassion . এলান জ্যাকব নামটি পশ্চিমা পশ্চিমা মনে হলেও ইনি শতভাগ বিশুদ্ধ ইন্ডিয়ান । নাম ও চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ইনি ভারতীয় বংশোদ্ভুত ইহুদি ।
সেই লেখাটির ভেতরে এক জায়গায় এই এলান জ্যাকব শেখ হাসিনাকে Eastern Star বা প্রাচ্যের তারকা হিসাবে অভিহিত করেছেন । তিনি এই টাইটেলটি দিয়েও শিরোনাম করেন নি । লেখার ভেতরে এক জায়গায় শব্দটি উল্লেখ করেছেন মাত্র । তাতেই বাসস ইউরেকা ইউরেকা বলে দৌড়া তে শুরু করে দিয়েছে । আর বাসস এর সাথে দৌড়ানো শুরু করেছে প্রথম আলো সহ প্রায় সবগুলি পত্রিকা । সবার একই শিরোনাম , প্রাচ্যের তারকা শেখ হাসিনা : খালিজ টাইমস ।
এখন প্রশ্ন হলো , এই টাইটেলটি বিশ্বের কোনও নামী দামী সংস্থা বা রাষ্ট্র প্রদান করে নি । বিশ্বের নামকরা কোনও কলামিষ্ট , সম্পাদক , পরিচালক, কবি , সাহিত্যিক এই মধুর শব্দে সম্বোধন করেন নি । এক অজ্ঞাত , অখ্যাত ব্যক্তির উল্লেখ করা একটি বাক্যাংশ কীভাবে একটি দেশের জাতীয় পত্রিকারগুলোর প্রধান শিরোণাম হতে পারে ? তারপরেও একটি বা দুটি পত্রিকা নয় । দেশের প্রায় সবগুলি পত্রিকা এক যোগে এই কাজটি করেছে । কয়েকটি পত্রিকার লেখার বিষয় ও শিরোনাম হুবহু এক ।
বিষয়টি একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্যে কতটুকু সম্মানজনক তাও ভেবে দেখা দরকার । একজন অজ্ঞাত, অখ্যাত সাংবাদিকের দেয়া টাইটেল নিয়ে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রযত্নে এই কিছিমের উচ্ছাস একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক দৈন্যতাই তুলে ধরে ।
The Economist , The New York Times , The Washington Post , The Guardian প্রমুখ নামী দামী পত্রিকায় বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এরূপ অনেক সংবাদ ছাপা হয়েছে , অনেক টাইটেলও দেয়া হয়েছে । অথচ এগুলি নিয়ে এদেশের পত্রপত্রিকায় একটি রিপোর্টও করা হয় নি ।
The Economist এ কিছুদিন আগে ' Bangladesh’s prime minister uses piety to mask misrule' শিরোনামে একটি আর্টিকেল ছেপেছিল । শিরোনামটির ভাবার্থ হলো " নিজের অপশাসন ঢাকতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বক ধার্মিক সেজেছেন । " এই রচনায় শেখ হাসিনাকে স্পষ্টতই গণতন্ত্রের হন্তারক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে । এখানে বলা হয়েছে ,SHEIKH HASINA WAJED has inflicted many injuries on Bangladesh’s democracy.
কোনও এক মরু প্রান্তের স্বল্প পরিচিত পত্রিকার অখ্যাত সাংবাদিকের দেয়া একটি টাইটেল নিয়ে চাটার দল সারা দেশ মাতিয়ে তুলেছে । অথচ সারা বিশ্বে বহুল প্রচারিত পত্রিকার অনেক অনুসন্ধানী রিপোর্টকে সম্পূর্ণ ইগনোর করা হয়েছে ।
আসল কথা হলো , আমাদের মগজে পচন ধরেছে । তাতে অনুভূতির অনেক সেন্সর নষ্ট হয়ে পড়েছে ।
আজ যেখানে হাসার কথা সেখানে আমরা কাঁদি , আর যেখানে কাঁদার কথা সেখানে আমরা হাসি ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন