‘মিস ওয়ার্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিদের স্কোরশিটের একটি ছবি দেখলাম। সেখানে অংশগহণকারীদের নাম, উচ্চতা, ওজনের পাশাপাশি ‘বুক’, ‘পেট’ ও ‘কোমর’ এর মাপের বর্ননা থাকলেও তাদের ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ কিংবা ‘বুদ্ধিমত্তা’ বিষয়ক কোন বর্ননা নেই।
শারিরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একজন নারীকে ‘পন্য’ হিসেবে বিচার করার এই পুরুষতান্ত্রিক পদ্ধতির আবিষ্কারকের নাম এরিক মোরলে নামের ব্যবসায়ী।
নারীদেহকে পন্য হিসেবে উপস্থাপনের জন্যই ১৯৫১ সালে এই ব্যবসায়ী ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতা শুরু করেছিলেন।
পন্য যাচাই বাছাইয়ের মানদণ্ড হিসেবে বাহ্যিক শারিরিক সৌন্দর্য্যকেই বিচার্য বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা এখনো বলবত আছে। কার ত্বক কত সুন্দর? উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কেমন? উচ্চতা ও ওজন অনুযায়ী পেট কত সরু, বুক-কোমর কত চওড়া? পা কত দীর্ঘ? হাসি কেমন? চাহুনী কেমন? বাচনভঙ্গী কেমন? মূলত এসব বিচার করেই ‘বিশ্ব সুন্দরী’ নির্ধারণ করা হয়। সেই সাথে পূর্বশর্ত: বিবাহিত হওয়া যাবে না, সন্তানের মা হওয়া যাবে না।
বলা বাহুল্য শারিরিক এইসব বিষয় মাপ-জোক ও পর্যবেক্ষণের জন্য অংশগ্রহনকারীদের সকলকে এক পর্যায়ে বিকিনি পরে বিচারক ও নির্বাচিত দর্শকদের সামনে হাজির হতে হয়।
বাংলাদেশের ২৫হাজার নারী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। তার মানে তারা সবাই এই শারিরিক প্রতিযোগিতায় বিকিনি পরে নিজেদের পন্য হিসেবে উপস্থাপন করতে প্রস্তুত ছিল!
খবরে দেখলাম সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীনিকে তার বিবাহের তথ্য গোপন করার কারণে খেতাব কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
এই খবর প্রকাশের পর আমার পরিচিত অনেক বিদূষী নারীও প্রতিবাদে ফেটে পরেছেন! বিশিষ্ট নারীবাদী প্লাটফরম ওমেনচ্যাপ্টারে এই বিষয়ে পোস্ট লেখা হয়েছে এবং সেগুলো আমার ফেসবুকের হোম পেজে দেখতে পাচ্ছি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- তারা নারীকে পন্য হিসেবে বিচার করার প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করছেন না, তারা বিরোধিতা করছেন সেই প্রতিযোগিতায় বিবাহিতকে বাদ দেবার নিয়মের!
মাংসের দোকানে নিজেকে পন্য হিসেবে উপস্থাপন করলে তো মাংস বিক্রির নিয়ম মেনেই সেটা করতে হবে তাই না? খরিদ্দার তো দাগী পশুর মাংস কেনার জন্য পয়সা দেয় না।
পুরুষতান্ত্রিক ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়াকে নারীবাদীরা ঠিক কোন কারণে সমর্থনযোগ্য মনে করেন সেটা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আজো বুঝতে পারিনি। এখন এইসব বাঙালী নারীবাদীদের দাবী অনুযায়ী ‘বিবাহিত’ কিংবা ‘সন্তানের মা’ নারীদের ঐ প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহনের অনুমতি দিলে, নারীর পন্য হিসেবে উপস্থাপনের বিষয়টা কি তাদের কাছে সঠিক হয়ে যায়!
‘ওমেনচ্যাপ্টার’ তাহলে নারীর যোগ্যতা হিসেবে ‘শিক্ষা’ এবং ‘বুদ্ধিমত্তা’র মাপের চেয়ে ‘ত্বক’, ‘বুক’, ‘পেট’ ও ‘কোমর’ এর মাপকে বেশি গুরুত্বপূর্ন মনে করে!
ওয়াহিদুজ্জামানের ফেসবুক থেকে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন