এএফএ খালিদ হোসাইন
‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এ প্রবচনটি আশৈশব শুনে আসছি। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে পুলিশের বন্ধুসুলভ আচরণ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়নি। বরং আমার মত অনেকের মনে ভেসে উঠে পুলিশ মানে অজানা আতংক, ভীতিপ্রদ বিভীষিকা, ঘুষ বাণিজ্য ও রিমাণ্ডের নামে পৈশাচিকতার তাণ্ডব। পুলিশ হেফাযতে মৃত্যুর ঘটনা অহরহ। এসব কারণে কত পুলিশের শাস্তি হয়েছে, চাকরি গেছে। রক্তের দামে কেনা একটি সার্বভৌম দেশের জনগণের সাথে পুলিশ শত্রুসুলভ আচরণ করবে কেন? তাইতো ‘বাঘে ছুঁলে এক ঘা আর পুলিশে ছুঁলে দশ ঘা’ অথবা ‘থানার পাশে কানাও হাঁটে না’ জাতীয় প্রবচন সাধারণ্যে ব্যাপকতা লাভ করে। পুলিশতো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নয় ? তারা আমাদের ভাই, আমাদের সন্তান। এরা তো পাঞ্জাবী নয়, সাদা চামড়ার বিলেতি সেনাও নয়। তারপরও কেন মারমুখো ? এর পেছনে অনেক কারণের মধ্যে আছে প্রথমত ঔপনিবেশিক মানসিকতা (Colonial Mentality), দ্বিতীয়ত পুলিশ কনস্টেবলের বেতনও অনুষঙ্গিক সুবিধে কম, তৃতীয়ত আধুনিক প্রশিক্ষণের অভাব এবং চতুর্থত ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক পুলিশকে বিরোধী ও প্রতিপক্ষ দমনের উদ্দেশ্যে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার। ফলে পুলিশ বেপরোয়া। নিজেদেরকে আইনের উর্ধে মনে করে। অথচ ভুটান, সুইডেন, ফিনল্যন্ড, ব্রিটেন ও নরওয়ের মত দেশে ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এ কথাটি অনেকাংশে সত্য। আমাদের কাছের দেশ ভুটানে কোন আসামীর সাথে পুলিশ খারাপ আচরণ করে না, পুলিশী হেফাযতে নির্যাতন করে না। অসদাচরণ যদি প্রমাণিত হয় তা হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশের পদোন্নতি, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (Increment) ও বিদেশে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে (Peace Keeping Mission of UN) যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের হাতে আটক হলেই মানুষ দোষী বা অপরাধী হয় না।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, পুলিশের ভাল ও কল্যাণকর দিকও অাছে। তাঁরা জীবন বাজি রেখে আমাদের নিরাপত্তা দেন, দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনেন। আইন শৃঙ্খলা দেখবাল করেন। পুলিশের মধ্যে সৎ, নিষ্ঠাবান, ন্যায়পরায়ন, দেশপ্রেমিক, মানবিক চেতনাসম্পন্ন মানুষও আছেন। তবে তাদের সংখ্যা কত তা বলা বেশ মুশকিল।
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী Tony Blair বলেন,
Anywhere, anytime ordinary people are given the chance to choose, the choice is the same: freedom, not tyranny; democracy, not dictatorship; the rule of law, not the rule of the secret police.
চলতি মাসের ১তারিখ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যংককের ব্যস্ততম শপিং সেন্টার ‘চাতুচাক’ থেকে শপিং সেরে সুকুমভিত ম্যানহাটন হোটেলে ফেরার জন্য মার্কেটের গেটে দাঁড়িয়েছি। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় যানজট প্রবল। ট্যাক্সি পাওয়া কঠিন ছিল। সংখ্যায় আমরা তিনজন। ছোট ছেলে তালহা মোবাইলে গ্র্যাব কার (Grab car) বুক করল। ড্রাইভার জানাল মার্কেটের সামনে প্রচণ্ড ভীড়, আপনারা পুলিশ পার্কের সামনে আসেন, আমি এখানে আছি। স্থানটি খুঁজে পেতে আমাদের বেগ পেতে হল। ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতা নিলাম। তিনি রোড দেখিয়ে বললেন এখান থেকে সোজা কোয়ার্টার কি.মি. গেলে পুলিশ পার্ক। এক পর্যায়ে পুলিশ রাস্তায় সিগন্যাল দিয়ে একটি খালি মাইক্রো দাঁড় করালেন এবং ড্রাইভারকে বললেন উনারা বিদেশী, পুলিশ পার্ক চিনেন না, তোমার যাত্রাপথে তাঁদের নামিয়ে দেবে, ভাড়া নেবে না। মুহূর্তেই আমরা তার গাড়ীতে করে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে গ্র্যাব কার পেলাম। পেছনে ফিরে দেখি পুলিশ সার্জেন্ট স্কুটার নিয়ে হাযির। দেখতে এলেন অচেনা ড্রাইভার আমাদের কাঙ্খিত স্থানে নামিয়ে দিল কিনা। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমরা বিদায় নিলাম। পুলিশের এ আচরণ কল্পনা করা যায় ! এসব পুলিশ আসলে জনগণের বন্ধু।
ফেসবুক থেকে
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন