চিন্তিত চিন্তাবিদ
মায়ের সম্মান পুনরোদ্ধারে ছেলে জনতার সামনে এসে দাড়িয়েছে দৃশ্যটা সুন্দর। এজন্য সামিয়া রহমানের ছেলেকে ধন্যবাদ দিয়েই শুরু করি। সে যেমন বড় স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে কষ্ট করে পড়তে অনুরোধ করেছে, তার জবাবটাও বড় হয়ে গেছে, তবুও সবাইকে পড়তে অনুরোধ করব।
সামিয়া রহমানকে এ পর্যন্ত যতটুকু চিনেছি সেথেকে বলতে বাধ্য হচ্ছি তার চরিত্রের মতই উনার ছেলের আর্টিকেলেও কুযুক্তি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না। কয়দিন আগে সামিয়া রহমানের আরেকটি গবেষনাপত্রে তার একচোখা, যুক্তিজ্ঞানহীন বক্তব্য পেশ করে নিজের অবস্থানকে যেকোন মূল্যে সঠিক প্রমান করে, সমস্ত দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে সত্য-মিথ্যার মিশ্রন করার যে চিত্র তুলে ধরেছি, তার ছেলের সম্পূর্ণ স্ট্যাটাসটি সেই গন্ডির বাইরে যেতে পারেনি।
উনি উনার স্ট্যটাস শুরুই করেছেন ঢাকা ট্রিবিউনকে গালিগালাজ করে। ঢাকা ট্রিবিউন তার মায়ের নামে অভিযোগ আনেনি। এনেছে শিকাগো প্রেস, ঢাকা ট্রিবিউন সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ঘটনা প্রকাশ করেছে কেবল। তার ছেলে কি সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে পাতার পর পাতা নকল করার অভিযোগ আসার কথা অস্বীকার করছেন নাকি শিকাগো প্রেসকেও একটি শেইমলেস/বায়াসড প্রতিষ্ঠান ডাকার পায়তারা করছেন?
তিনি পুরো দোষটাই মারজানের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি জনগণকে তদন্ত শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলছেন, অথচ নিজেই মারজানকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলছেন। কমেন্টে সবাইকে উত্তর দিচ্ছেন এটা আইনী ব্যাপার, জনগণ কেন মাথা ঘামাচ্ছে, অথচ তার মা ছিল শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম সমর্থনকারী। এখানে মনে হয়না, আর বিস্তারিত বলার কিছু আছে।
কমেন্টে অনেকে সামিয়ার সাথে মারজানের মেইল কমিউনিকেশনের স্ক্রিনশট আসার কথা উল্লেখ করেছেন, যার ফলে প্রমাণিত হয় সামিয়া কিছুই জানতোনা তা বোগাস কথা বা তার ছেলের ভাষাতে বলতে গেলে ‘বুলশিট’। আর যুক্তির দিকে গেলে বলব ফার্স্ট অথর হিসেবে সামিয়াকেই অভিযোগ খন্ডাতে হবে, কারণ ফার্স্ট অথরই পেপারের সুবিধা বেশী ভোগ করেন। দায় তারই, বিশ্বের সব জায়গায়।
সামিয়া এখন পর্যন্ত মারজানের বিরুদ্ধে কোন তথ্য প্রমাণাদি না জড়ো করতে পারলেও, সামিয়ার ছেলে মারজানকে ‘ভিলেইন/ডেভিল অব দি ইনসিডেন্ট’ ডেকেই ঘটনার বর্ণনা শুরু করলেন। তার যুক্তিগুলো এখানে আরো আশ্চর্যজনক। তার মতে সামিয়া এই আর্টিকেল লেখাতেই রাজী ছিলেন না কারণ সামিয়া মারজানের ব্যাপারেই খুশী ছিলেন না। অথচ মজার ব্যাপার এখানে সামিয়া শুধু কো-অথর নন, মেইন অথর। জার্নাল পাবলিশকালে সমস্ত অথরকে যোগাযোগ করবে, নইলেতো অনেক রেপুটেটেড অথরের নামেই কতজন ভুয়া জার্নাল ছাপিয়ে তাদের সারা বিশ্বে সমস্যায় ফেলতে পারে।
আর্টিকেল ছাপা হয়েছে দুই বছর আগে। অথচ সামিয়া এই নকল আর্টিকেলের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নেন নি। এটা নাকি তার মহত্বের কারণেই ঘটেছে। তাকে ফার্স্ট অথর করে পাবলিক অ্যাকসেসে একটা নিম্নমানের আর্টিকেল আছে, সেই ব্যাপারে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই, এটা কেমন মহত্বের লক্ষণ? এছাড়াও যদি মারজানই লিখে তার মাকে ফার্স্ট অথর বানায়, তাহলে সামিয়া কি একবার পড়েও দেখেনি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা হিসেবে তার কোন গবেষণাপত্র বিশ্বের দরবারে যাচ্ছে সে ব্যাপারে তার মাথাব্যাথা নাই? নাকি উনি আমাদের ট্যাক্সের টাকা পকেটে পুড়ে দুতিন জায়গায় জব নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলেন?
সামিয়ার বিরুদ্ধে নাকি ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে আরম্ভ করে সাংবাদিক মহল সবাই দাড়িয়ে গেছে। তাদেরকে তিনি সিম্পলি হিংসুক ডেকে বসলেন। সেই সাথে গোটা বাংলাদেশকে স্টুপিড। এই ক্ষেত্রে আমি এ ছেলের পক্ষে আছি। কেননা সামিয়া রহমান যেসমস্ত লোকের মদদে আজকের সামিয়া রহমান হয়েছে তাদের হিংসুক চরিত্র নিয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নাই। আর বাংলাদেশের মানুষ স্টুপিড না হলে এইধরনের চোরেরা শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আমাদের ট্যাক্সের টাকায় দুটি ফুলটাইম জব ধারন করে দিনের পর দিন মিথ্যা গেলাতে পারেন না। কোনরূপ দায়বদ্ধতা ছাড়া বিভিন্ন টকশোতে, মিডিয়াতে একটা বিশেষ সম্প্রদায়কে এদেশে অচ্ছুত প্রমাণে মদদ জোগাতে পারেন না। সুস্থ স্বাভাবিক দেশ হলে সামিয়া রহমানেরা আজকে জেইলে থাকার কথা, শুধুমাত্র তাদের ভন্ডামির জন্য।
তারপরেই উনি সবচেয়ে বড় কুড়ালটা মেরেছেন বাংলাদেশে গায়ে। অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে সামিয়ার বিরুদ্ধে, অথচ উনি পুরা বাংলাদেশের জনতাকে যা বললেন তা হলো, ‘Bangladesh’s public is the most sexist and backdated countries of all time’। অর্থাত তার মা একমাত্র মেয়ে বলেই নাকি বাংলাদেশের পশ্চাদপদ জনতা মেনে নিতে পারছেনা সে এত সম্মানজনক পজিশনে এসেছে। একেই বোধহয় বলে, চোরের ছেলের বড় গলা।
এখানে প্রথমত বলতে চাই, সামিয়া রহমানের মত নারীবাদী মহিলা কি তার ছেলেকে শিখাননি পুরুষ মহিলার সমঅধিকারের কথা? তাহলে কোন ঝড়ঝাঞ্চা আসলেই ‘আমি নারী’ বলে চিতকার করছেন কেন? বাংলাদেশে বড় ধরনের নকলের অভিযোগ সবচেয়ে বেশী এসেছে জাফর ইকবাল এবং হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে। তারা উভয়ই পুরুষ একথাও তারা ভুলে গেলেন? যে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের চেতনাকে পুঁজি করে সামিয়া রহমান তার আজকের ‘সম্মানজনক’ পজিশনের বড়াই করছেন, অবলীলায় সেই দেশকে তার ছেলে পশ্চাতপদ আর লিঙ্গ বৈষম্যের আধার ডেকে ফেললেন? এই শিক্ষাই তার মা দিয়েছেন?
পরিশেষে উনি আরো এক হাস্যকর যুক্তি ধরেছেন। তার মায়ের লেখা বই ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের বিজনেস অ্যামাজনে পাওয়া যায়, সেই মহিলা কেন কারো লেখা থেকে চুরি করবে। অ্যামাজনে একটা কেনাবেচার দোকান, এর বৈশিষ্ট্য হলো আপনি একটি প্রোফাইল খুলে আপনার ভাঙ্গা বদনাও বিক্রি করতে পারবেন, শুধুমাত্র বিক্রি হলে অ্যামাজনকে ব্যবহার করার জন্য একটা ফি দিতে হবে। অ্যামাজনে বদনা বিক্রি করছেন বলেই আপনি আন্তর্জাতিক বদনা বিক্রেতা হয়ে যাবেন না।
দু:খের সাথে জানাতে চাচ্ছি, বাংলাদেশের বর্ডার পার হয়ে সামিয়া রহমানদের নাম জানার মত অবস্থা নেই আজকে সামিয়া রহমানদের জন্যই। কারণ এরা তাদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা দিয়ে দেশকে দুভাগে বিভক্ত করতে অবদান রেখেছেন, দেশে অন্যায় জিইয়ে রাখতে সাহায্য করেছেন, তার উপর তাদের মত অসত শিক্ষক দ্বারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিয়ে সম্পূর্ণ দেশটাকে ডুবিয়েছেন। এদের মদদেই তার ছেলের ভাষায় আমাদের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল ‘স্টুপিড, লোকাল জার্নাল’। সেই কারণেই এতে স্টুপিড ডিসঅনেস্ট টিচারস ক্যান প্লেজারাইজ উইদাউট ডিটেকশন।
তাতে সামিয়া রহমানরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবানও হয়েছেন, যেকোন মূল্যে সকল অন্যায়কে জাস্টিফাই করেছেন, যাকে তাকে রাজাকার জঙ্গি বলে পথে বসিয়েছেন, খুন করিয়েছেন, এখন তাকে দেশের মানুষ চোর বলছে বলে তার গায়ে লাগছে, পরিবার বিদ্ধস্ত হয়ে পড়েছে বলে দেশের মানুষের দিকে আঙ্গুল তুলছেন। অথচ কত পরিবারকে শেষ করে দেয়ার পেছনে সামিয়াদের হাত আছে তার ইয়ত্তা নেই।
সামিয়ার ছেলে শেষ কথায় লিখলেন মে আল্লাহ ব্লেস হার, অথচ তার ছেলেকে কি জানেন, এই আল্লাহর ইসলামকে বাঁচাতে যে হেফাজতের আন্দোলন হয়েছিল, কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া তাদের ‘জঙ্গি’ ডেকে আর্টিকেল লিখেছেন তার মা, অথচ আজ প্রমাণসহ তাকে চোর ডাকা হলে এত প্রতিক্রিয়া দেখানো কি ঠিক?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন