গতকাল থেকে কয়েক ঘন্টা হুজুরের সাথে কাটাতে হয়েছে। মানুষের বয়স যত বৃদ্ধি পায়, জ্ঞান যত বৃদ্ধি পায়, বুজুর্গি যত গভীরে যায়, প্রজ্ঞা যত বাড়তে থাকে, ব্যক্তিত্ব যত উন্নত হতে থাকে ততই মানুষ মাটির মতো হয়ে যায়। ততই মানুষের ব্যবহার পানির মতো নরম হয়ে যায়। এই গুণগুলো আজকাল বড় মানুষের মাঝে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। কিন্তু সিলেটের একজন আলেমের সান্নিধ্য আমি সবচে বেশি গ্রহণ করি। তিনি হচ্ছেন আমার উস্তাদ মুফতি মাওলানা আবুল কালাম জাকারিয়া। জামেয়া কাসিমুল উলুম শাহজালাল দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম। আল্লাহপাক তাঁকে সুস্থ শরীরে বহুদিন আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখুন।
এই একজন কিংবদন্তিতূল্য আলেমেদ্বীন। যার কাছে একজন রিক্সাড্রাইভার থেকে শুরু করে মন্ত্রী মিনিস্টার সকলেই সমানভাবে কদর ও মর্যাদা পায়। ২০০১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বহুদিন বহুসময় বহুক্ষণ হুজুরের পাশে বসেছি। বিভিন্ন ছোটখাটো সফরসঙ্গি হয়েছি। মানুষের তবকা অনুযায়ি ব্যবহারিক বড়ত্বের কোনো ছাঁপ হুজুরের মাঝে পাইনি।
আলহমাদুলিল্লাহ। আমার কিছু বদ অভ্যাসের মধ্যে একটা হলো মানুষের ছোট ভুলগুলোও খুব দ্রুত ধরা পড়ে যায়। কিন্তু হুজুরের পাশে বসে বিভিন্ন সময়ে খুঁত খুঁজার চেষ্টা করেও পাইনি।
টাকার কাছে এদেশের কতিপয় নামধারী আলেম ওলামা কতভাবে বিক্রি হচ্ছেন, কতভাবে খোলস পাল্টাচ্ছেন, কতভাবে নিজেকে লাইমলাইটে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া এখানে ভিন্ন পরিচয় বহন করেন। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আজই আপনি যেতে পারেন তাঁর কাছে। একজন রিক্সা ড্রাইভার পরিচয় দিয়েও কথা বলতে পারন। দেখুন তাঁর ব্যবহার। তার মার্জিত আচরণ। অন্তত সিলেটের ওলামা মাশায়েখ হুজুরের মাটির মতো আচরণ থেকে অনকে কিছুই শেখার আছে।
সেদিন আমার একজন বন্ধু বললো, সে ঢাকা থেকে তার এক বন্ধু মুফতি মাওলানা.... কে নিয়ে সিলেটের এক আলেমের কাছে সাক্ষাতের জন্য গেছে। রুমের সামনে গিয়ে সালাম দিতেই তিনি বলে উঠলেন- যান যান, পরে আইসেন। আমি একটু ব্যস্ত আছি। মুফতি সাহেব উনাকে পরিচয় দেবার আগেই তিনি অনেকটা তাড়িয়ে দেবার মতো আচরণ করে দূরে সরিয়ে রাখলেন। আল্লার ইচ্ছায় ঐ মুফতি সাহেবের মন ইতিবাচক দৃষ্ঠিতে থাকার কারণে তিনি কিছু মনে না করে ফিরে এলেন দেখা না করেই।
এখান থেকে আমাদের কি শিক্ষা নিতে হবে? আল্লাহর রাসুলের (সা.) স্বভাব কি ছিলো। আবু বাকার উমর উসমান আলীর (রা.) উনাদের স্বাভাব কি ছিলো। ব্যবহার কেমন ছিলো। আর আমাদের ১৪শ বছরের পরের ওলামা শায়খদের স্বভাব কি আছে আর ঐ তাড়িয়ে দেয়া আলেমের স্বভাব কোন পর্যায়ের। আস্তাগফিরুল্লাহ।
আমি আজ সকালে হুজুরকে নিয়ে যখন এক জায়গায় গেলাম। গিয়ে দেখলাম আমাদেরই এক বড় ভাই আলমেদ্বীন সেখানে উপস্থিত। তিনি গত ১৫ বছর থেকে আমাকে চিনেন। অামার অসংখ্য প্রগ্রামে তিনি আলোচক ছিলেন। কিন্তু আমি সালাম দিয়ে অনেকটা জোর কারে তার সাথে হাত মিলালাম। যেনো তিনি আমাকে চিনতেই পারছিলেন না। মাশাল্লাহ। উনি এখন অনেক বড় আলোচক। অনেক বড় বক্তা। কিন্তু কেনো? এই ক্যামিকেল মানসিকতা কেনো হবে আমাদের। আমরা তো যত বড় হবো ততই আমাদের মানসিকতা আরো বেশি বড় হওয়ার কথা। আমরা ইজ্জত হাতে নিয়ে হাটব কেনো? ইজ্জত তো তিনিই ক্রিয়েট করেন। “ওয়াতুইজ্জু মান তাশাউ ওয়াতুজিল্লু মান তাশা, বিয়াদিকাল খাইর”। মানুষকে বিশ্বাস করেন আর নাই করেন আল্লাহর কালামকে তো বিশ্বাস করেন। আল্লাহকে তো বিশ্বাস করেন। তাইলে এমন ভাব নিয়ে বেঁচে থাকার মাঝে স্বার্থকতা কতটুকু নিজেই বিবেচনা করা উচিত। যাই হোক, আল্লাহপাক আমাদের সকলকে মাাটির মানুষ হওয়ার তাউফিক দিন।
ফেসবুক থেকে সংগ্রহ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন