মুন্সী বিশ্বজিৎ
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজ কি দয়া কইরা আমাদের জানাইবেন... এইখানে কেইসটা কি? শোনা যাইতেছে-- আপনার কোন প্রজেক্টের লগে ডঃ মোবাশ্বার সিজার জড়িত থাকার কারনে উনি বাংলাদেশ সরকারের বিরাগভাজন হয়া তাঁদের রোষানলে পড়ছেন,এবং উনার নিখোঁজ হয়া যাওনের লগে এইটার একটা যোগসুত্র রইছে। আপনি কি আমাদের মেহেরবানি কইরা কইবেন-- এই বিষয়ে আপনার ব্যাখা কি...?
প্রফেসর আলী রিয়াজ, এইটা সত্য গোপন করার সময় নহে, সিজারের উধাও হয়া যাওয়া নিয়া আপনার মুখ খোলা উচিত।
বাংলাদেশে লাগাতার গুম আর উধাও হয়া যাওনের আর এক ভিক্টিম হইলেন নর্থ সাউথের টিচার সিজার। গত কয়েক দিন যাবত সারা দেশে এবং অনলাইনে ডঃ মোবাশ্বার সিজার এর গুম হয়া যাওয়া নিয়া সবার মাঝে দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার জোয়ার বইতেছে। উনার পরিবারের আপনজনদের মাঝে, উনার শিশু সন্তানের মনে যে বিষাদ আর মনঃকষ্ট, সেইটা আমাদের সবাইকে পীড়িত করছে...। অথচ ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার পরেও, আপনি এই বহুল আলোচিত ভয়ংকর ঘটনা নিয়া, এতদিন ধইরা ক্যামনে নীরব রইছেন...!! আপনার এই নির্লিপ্ত ভাব, আপনার এই প্রতিক্রিয়াহীনতা্, আমাদের সবাইকে হতবাক করতেছে। প্রফেসর রিয়াজ, আপনি কি সিজারের পরিবার, তার কাছের বন্ধু সহ আমাদের সবাইকে জানাইবেন-- সিজারের গুম হয়া যাওয়া বিষয়ে আসলেই কি ঘটছিল...? USIP (United States Institute of Peace) এর অধীনে আপনার সেই অসমাপ্ত প্রকল্প, যা নিয়া বাংলাদেশ সরকার বিরক্ত হইছিল এবং সরকার অন্ততঃ দুই বার বাধা দিয়া, আপনাদের এই প্রকল্প বন্ধ কইরা দিতে চাইছিল। আপনাদের সেই অসমাপ্ত প্রকল্পের কার্যক্রমের লগে সিজারের গুম হয়া যাওনের যোগসুত্রটা কি ...?
প্রফেসর আলী রিয়াজ, এরই মাঝে ফেসবুকে আমরা ক্রিষ্টিনা ফেয়ারের লগে পরিচিত হইছি। সেইখানে দেখতেছি তিনি সিজারের গুম হয়া যাওয়ার বিষয়ে আমাদের কিছু তথ্য জানাইতেছেন। যেইখানে আলী রিয়াজ, আপনার নামও দেখা যাইতেছে। পাঠকদের এই প্রসঙ্গে জানাই, ক্রিষ্টিনা ফেয়ার হইলেন র্যান্ড (RAND Corporation) এর প্রাক্তন পলিটিক্যাল সাইন্টিস্ট, যিনি বর্তমানে জর্জটাউন বিশ্ববিদালয়ের লগে যুক্ত, জাতিসংঘের আফগান মিশনের কাজেও তিনি দীর্ঘদিন কাবুলে কাটাইছেন। আর র্যান্ড হইল এক আমেরিকান থিঙ্ক-ট্যাংক প্রতিষ্ঠান। আমেরিকান সরকারের নীতি পলিসি আগাম তৈরি কইরা, সেইটা আগায়ে দেওনের প্রতিষ্ঠান। এরপরে থিঙ্ক-ট্যাংকের তৈয়ার করা সেই নীতি কিংবা পলিসি, কতটা নিবে নাকি পুরাটাই বাদ দিবে, সেইটা অবশ্য আমেরিকান প্রশাসনের ইচ্ছা। রান্ডের সাথে আমেরিকান সম্পর্ক গইড়া উঠছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভুমিতে। আমেরিকান বিমান বাহিনীর সাথে কাজ করে, এমন এক ঘনিষ্ট বেসরকারি যুদ্ধবিমান কোম্পানীর গর্ভে জন্ম লওয়া প্রতিষ্ঠান হইল এই RAND । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে সে পয়দা হয়। পরে যুদ্ধ শেষে RAND আলাদা থিঙ্ক-ট্যাংক প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ শুরু করে।
এই আমেরিকান থিঙ্ক-ট্যাংক র্যান্ড কর্পোরেশন, তাগোর লগে প্রফেসর আলী রিয়াজ আপনি ক্যামনে সংযুক্ত...? তাগোর লগে আপনার সম্পর্কটাই বা কিয়ের? আপনি কি তাঁদের হয়া কাম করেন...?? জানা দরকার...।
এদিকে র্যান্ড এর প্রাক্তন পলিটিক্যাল সাইন্টিষ্ট ক্রিষ্টিনা ফেয়ার আমাদের জানাইতেছেন, তিনি এবং আলী রিয়াজ মিলা, সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক একটা প্রজেক্টে কাম করতেছেন, যার বিষয়বস্তু বাংলাদেশ সরকারের পছন্দনীয় নয়। সরকার তাঁদের কাজে, হস্তক্ষেপ করছে। কিন্তু সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও, তারা বাংলাদেশে এই প্রজেক্টের কাজ চালায়া নিয়া যাইতেছিলেন। প্রজেক্টের বিষয়ে বিস্তারিত উনি না জানাইলেও, বুঝা যাইতেছে-- বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ নিয়া উনারা এমন কিছু প্রমান প্রতিষ্ঠা করতে যাইতেছেন, যা সন্ত্রাসবাদ নিয়া বাংলাদেশের সরকারী যে অবস্থান (ক্রিষ্টিনা ফেয়ারের ভাষায় pacifist sufism blah blah) তার বিপরীত। অর্থাৎ সরকারের অবস্থানকে ভুল প্রমান করাই হইল রিয়াজ সাহেবেদের প্রজেক্ট।
বাংলাদেশে টেররিজম নিয়া, এইখানে আই এস এর প্রেজেন্স নিয়া হাসিনা সরকার ডাউন প্লে করতে চায়, এইটা নিয়া আমরা অবগত আছি। আইএস আসলে থাকুক আর নাই থাকুক, হাসিনা সরকার মনে করে-- বাংলাদেশে আইএস নাই। আই এস নিয়া এটাই সরকারের অবস্থান। এইগুলা আমরা সবাই জানি। এখন দেখা যাইতেছে আলী রিয়াজ এবং ক্রিষ্টিনার এই প্রজেক্ট বাংলাদেশ কে টেররিষ্টদের অভয়ারন্য হয়া গেছে হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া। আবার এইভাবে আইএস এর প্রেজেন্স দেখানি নিয়া সরকার বিরক্ত এবং ক্ষুদ্ধ।
আমরা অনুমান করি-- রিয়াজের হাইপোথিসিস হইতেছে বাংলাদেশ একটা মিলিট্যান্ট মুসলিম দেশ, এইটা প্রমাণ করা। এইভাবে সরকারকে দায়ী করা। কিন্তু আসল কথাটা সাফ সাফ বলেন তো, প্রফেসর আলী রিয়াজ-- আপনার এই প্রজেক্টটা আসলে কার প্রজেক্ট? এইটা কি আদতে একটা সিআইএ'র প্রজেক্ট, যেইখানে আপনি নিয়োজিত আছেন, নাকি এইটা ‘র’ এর প্রজেক্ট...? কাদের হয়া আপনি এই কাম করতেছেন, এইটা আমরা জানতে চাই। তা না হইলে সরকার বাধা দেওনের পরেও আপনারা যেইভাবে এইটা চালায়ে নিতে চাইতেছেন-- তার লাগি যে হ্যডম লাগে, এইটা কারা যুগাইতেছে...? আপনাদের শক্তিটা কোথায়...?
তবে সবচেয়ে বিপদজনক যে ব্যাপার আমরা দেখতেছি, যে আসলে টেররিজম প্রসঙ্গে বাংলাদেশের আসল অবস্থা নিয়া সরকার কিংবা গবেষক হিসাবে আপনারা দুপক্ষই ঠিকঠাক কথা কইতেছেন না। আমাদের সন্দেহ হইতেছে এবং আমরা সন্দিহান যে, আপনারা দুপক্ষই নিজের নিজের স্বার্থে এমন দুই অবস্থান নিছেন, যার কোনটার মাঝেই বাংলাদেশকে পাওয়া যাইবো না। মানে খোদ বাংলাদেশের স্বার্থটাই এইখানে হারায়ে গেছে।
প্রফেসর আলী রিয়াজ, প্রসঙ্গ এখানেই শেষ না। সিজারের গুমের ঘটনার পরে পরেই কয়েকদিনের ভিতর এক তরুন প্রকাশক তানভিরও গুম হয়ে গেছেন আমরা জানতে পারছি। এইটা নিয়া প্রথম আলোর রিপোর্টও আমরা দেখছি। প্রশ্ন হইলো, এই দুইজনের গুম হয়া যাওনের পিছনে যোগসুত্রটা কী, এবং কোথায়? কোন যোগসুত্র কী আসলে আছে...? আমরা আশা করব আলী রিয়াজ এই বিষয়টা নিয়াও পরিস্কার কইরা আমাদের দু'চার কথা জানাইবেন। কিন্তু খোলা পাতার মত ইতিমধ্যে আমরা যা জানতে পারছি, তা হইলো, তানভির খুবই তরুন এক ব্যবসায়ী। তার আব্বার ইন্তেকালের পরে মাত্র চার মাস আগে তিনি তার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান “করিম ইন্টারন্যাশলান” যা আসলে বিদেশী বই আমদানি, সরবরাহ ও পরিবেশকের ব্যবসার করে-- তার হাল ধরছিলেন। তানভির নিজেই বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে জানাইছিলেন, যে তার কাছে বিদেশে এযাবত প্রকাশিত আলী রিয়াজের বই পাওয়া যায়, স্টক আছে। আবার এইটাও জানা যাইতেছে-- তানভিরকে গ্রেপ্তারের সময়, তানভিরের ব্যাংক হিসাব ও ব্যাংকের চে্কের খোজে, পুরা বাসা তছনছ করা হইছে। চাপাচাপি করা হইছে। তাইলে এইটার মানে কী-- আলী রিয়াজের এই প্রজেক্ট এর কোন টাকা কি তানভিরের নামে চ্যানেল কইরা আসছিল...? তাই কী? রিয়াজ সাহেব এইটা ভাল বলতে পারবেন। উনি আশা করি বুঝবেন, মানুষকে গুমের শিকার হওনের লাহান বিপদে ফেলা উচিত না।
ঘটনার আরও এক পর্ব আছে।
আলী রিয়াজদের গবেষণা কাজ “bangladesh a critical reader” নামে প্রথমা প্রকাশনী বাজারে আনতেছে। প্রথম আলো'র এই প্রকাশনা থিকা বই ছাপাবার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে আছে। এখন ঘটনা যেই ভাবে ঘটতেছে-- এর পরে ঘটনার শিকার কে হইতে যাইতেছেন...? আলী রিয়াজের লগে এই সংশ্লিষ্টতার কথা মাথায় রাইখা-- এখন কী মতিউর রহমানকেও সাবধানে থাকতে হইবো? আলী রিয়াজ সাহেব কি বলেন?
দ্যাখেন, প্রফেসর রিয়াজ সাহেব-- সব কিছু দেইখা মনে হইতেছে-- আপনি ছাড়া বাংলাদেশেরা সকলেই বিপদে আছে। বিশেষ কইরা গুম হয়া যাওয়া এই দুই তরূন, আপনাদের এই প্রজেক্ট তাঁদের জীবনকে একটা ঝুকির মাঝে ঠেইলা দিছে। অথচ নিজেরে বাচায়া নিয়া, আপনি নিজেরে নিয়া নিরাপদ দুরত্বে থাইকা যাইতেছেন। এই পরিস্থিতিতে আপনার কী সামনে আগায় আসা উচিত না...? আমরা মনে করি, সব কিছু নিয়া আপনার মুখ খোলা উচিত। অন্তত মানুষের হিউম্যান রাইটস ভায়োলেট, তার মানবিক বিপর্যয়ের কারনে...!
আর সরকারকে কইতে চাই, আপনারা আলী রিয়াজ সহ তাগোর মুরুব্বিদের কাছে আপনাদের আপত্তির বিষয় জানাইয়া ফয়সালা কইরা নেন। তরুন দুজনকে গুমমুক্ত কইরা, তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে, তাদের ছাইরা দেন।
অন্তত সিজারের ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটার খাতিরে...!
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন