ওলিউল্লাহ নোমান
২০০৫ সালে ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে যায়যায়দিন সপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রুপান্তরিত হয়। পত্রিকাটি মহাসমারোহে বের করার আয়োজন চলে দীর্ঘদিন ধরে। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বরাদ্দ পাওয়া দুই বিঘা জমির উপর নির্মান করা হয় আধুনিক সঞ্জামে সুসজ্জিত অফিস। অফিস ভবনের নিচ তলায় স্থাপন করা হয় পত্রিকার ছাপাখানা। সবকিছুই টিপটপ। রুচিশীলতার বহি:প্রকাশ ঘটে সবকিছুতে।
সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রে এখানেও প্রাধান্য দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ ও বামদের। পত্রিকাটিতে নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী সম্পাদক নূরুল ইসলাম ভুইয়া ছোটন। তিনি তখন সরকারের বেশ কাছের লোক। ঘনিষ্টজন হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অবাধ যাতায়াত ছিল তাঁর। নিয়োগের শুরুতে আওয়ামী বামদের কতৃত্ব সত্ত্বেও আমার ডাক পড়েছিল সেখানে। তাদের চাকচিক্য দেখে অনেকটা দোদুল্যমানতায় ছিলাম। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। অফারটাও বেশ ভাল ছিল।
একদিন শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক ইরাজ আহমদ (যাকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করি) প্রেসক্লাব থেকে তাঁর গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন। তিনি সেখানে যোগ দিয়েছিলেন চীফ পলিটিক্যাল রিপোর্টার হিসাবে। নুরুল ইসলাম ভুইয়া ছোটন ভাই অত্যন্ত সোহার্দ্যরে সাথে আমাকে সেখানে গ্রহন করলেন। নানা কথার ফাঁকে অফিসটি ঘুরে দেখালেন। অফিসের ডেকোরশেন দেখলে যে কারো মনে চাইবে এখানে চাকুরি নিতে। অফিস দেখার পর বার্তা সম্পাদক অমিত হাবিব (যিনি কঠোর বাম), সিটি এডিটর আমির উল ইসলামসহ (তিনিও বাম) আমাকে নিয়ে বসলেন। নিয়োগের আগে যা করা হয় পত্রিকা অফিসে। কথাবার্তার এক ফাঁকে অমিত হাবিব জানতে চাইলেন আমি সাংবাদিকদের কোন ফোরামের সাথে আছি কি না। সোজা সাফটা জবাব দিলাম। জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকরা দু’টি ফোরামে বিভক্ত। আমি একটি ফোরামের মনোনিত এ টু জেট প্রার্থীকে নির্বাচনে ভোট দেই। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ থাকে না। ফোরামের বিজয়টা তখন মাথায় কাজ করে। আর সেটা হচ্ছে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সাংবাদিকরা যে ফোরামে রয়েছেন সেটা। তখন তারা বুঝে নিলেন আমি চিন্ত চেতনায় কোন আদর্শে বিশ্বাস করি।
তারপরও তারা আমাকে সেখানে যোগাদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। অনেক দিন অপেক্ষা করেছেন আমি তাদের এখানে যোগ দেব মনে করে। কিন্তু তাদের এখানে যোগ দিতে পারছি না সেটা বলতে পারছিলাম না সোজা ভাষায়। ইরাজ ভাই প্রায়ই ফোন দিতেন। কবে নিয়োগপত্র নিতে যাব সেটা জানতে চাইতেন। বলতেন আপনার নিয়োগপত্র রেডি। এসে নিয়ে যান। সিভি বা বায়োডাটা লাগবে না। এখানে ফরম রয়েছে সেটা পূরণ করে দিলেই চলবে।
সমস্যা হয়ে গিয়েছিল ভিন্ন জায়গায়। যেদিন ইরাজ ভাইয়ের সাথে যায়যায়দিন অফিসে গেলাম তাৎক্ষণিক খবর পৌছে যায় আমার দেশ কতৃপক্ষের কাছে। যায়যায়দিন অফিস থেকে বের হয়ে কাওরানবাজারে আমার দেশ অফিসের দিকে রওয়ানা হই । রিক্সায় উঠা মাত্রই তৎকালীন চীফ রিপোর্টার পরবর্তিতে বার্তা সম্পাদক দৈয়দ আবদাল আহমদ ভাই ফোন দিলেন। ফোন ধরা মাত্রই বলা হয়, কোথায় আপনি! কোথায় গেছিলেন! দ্রুত অফিসে আসেন। সবাই জেনে গেছে আপনি কোথায় গেছেন।
অফিসে ঢুকার পথে লিফট থেকে নামতেই দেখি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকাশক আলহাজ্ব হাসমত আলী দাড়িয়ে আছেন লিফটে উঠার জন্য। তিনি অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। আমি অফিসে ঢুকার জন্য লিফট থেকে নামছি। তিনি লিফটে উঠছেন। আমাকে দেখেই অত্যন্ত আপনজনের মতই বললেন, ‘নোমান-কি শুনি এসব! আমি কিন্তু কিছু শুনতে চাই না। নির্বাহী সম্পাদক বাবু ভাই আপনার সাথে কথা বলবেন।’ বুঝতে পারলাম তিনি কি বলতে চেয়েছেন।
অফিসে প্রবেশ করা মাত্রই আবদাল ভাই বললেন, কি অবস্থা। কথাবার্তা সবকিছু ফাইনাল করে চলে আসছেন নাকি! বললাম কিছুই ফাইনাল করিনি। শুধু প্রাথমিক আলাপ আলোচনা করে এসেছি। ডাকলেন নির্বাহী সম্পাদক রশিদ উন নবী বাবু ভাই। তিনি বাড়তি কিছু না বলে শুধু বললেন ‘তোমার প্রমোশন ও ইনক্রিমেন্টের ফাইল সাইন করে দিয়েছি। দুই/একদিনের মধ্যেই চিঠি পেয়ে যাবে।’ সবার আন্তরিকতা ও সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী বামদের ভীড়ে আর যায়যায়দিনে যাওয়া হল না। এখানে চিত্রটা ছিল একেবারেই ইনকিলাবের বিপরীত। ইনকিলাব যখন শুনলেন আমার দেশ-এ যোগ দিচ্ছি তখন অবস্থাটা ছিল এরকম, পারলে সেই মূহুর্তেই আমাকে লাথি মেরে বের করে দেয়।
শেষে দেখা গেল পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান নিজেও এখানে থাকতে পারেননি। যিনি দীর্ঘদিন তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন যায়যায়দিনকে সপ্তাহিক থেকে দৈনিকে। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে যায়যায়দিন তখন জনপ্রিয় সপ্তাহিক। নিজের ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে সেটাকে দৈনিকে রুপান্তর করেছেন। তাঁর নিকট থেকে পত্রিকাসহ সকল সম্পত্তি লিখে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ১/১১-এর জরুরী আইনের সরকারের সময় তাঁকে সেখানে থেকে বিদায় করা হয়। আয়ামী বাম সাংবাদিকদের সহযোগিতা না থাকলে সেটা কোনদিন সম্ভব হত না। এভাবেই চার দলীয় জোট সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত ণমাধ্যম গুলো শুরু থেকে আওয়ামী বামদের দখলে চলে যায়। নিয়োগ দেওয়ার সময় আওয়ামী বামদের প্রাধান্য থাকায় সহজেই তারা সেখা দখল করে নিতে সক্ষম হয়।
কেউ হয়ত: বলতে চাইবেন আওয়ামী বামই যদি নিয়ন্ত্রণ করত তাইলে আপনাকে সেখানে চাকুরিতে নিতে চাইবে কেন! কথাটা একেবারেই খাটি। তবে আমাকে নয় নিতে চেয়েছিল আমার কর্ম দক্ষতাকে। আমরা কয়েকজন দৈনিক ইনকিলাবে কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম বিধায় নিজেদেরকে প্রমান করতে পারছিলাম। হলফ করেই বলতে পারি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী আমার চেয়ে সবদিক বিবেচনায় বেশি মেধাবী, কাজে কর্মে স্মার্ট, দক্ষ ছেলেরা তখন ছিল। কিন্তু সেরকম জায়গায় সুযোগ পায়নি বলে তারা নিজেদের প্রমান করতে পারেনি। সুযোগ পেলেই তারা নিজেদের প্রমান করতে পারতেন। কিন্তু জাতীয়তাবাদী বা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী যারাই গণমাধ্যম তৈরি করেছেণ চাকরির জন্য টার্গেট করেছেন আওয়ামী-বামদের। কারন তাদের কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রমানের জায়গা রয়েছে। সেসব জায়গায় তারা কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের প্রমান করেছেন। দৈনিক ইনকিলাব ছাড়া জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সেরকম কোন কাজগ বাজারে ছিল না। যেখানে কাজ করার সুযোগ পাবে। অপরদিকে আওয়ামী বামদের জন্য রয়েছে অসংখ্য সুযোগ। আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, জনকন্ঠ, প্রথম আলো, যুগান্তরসহ অনেক ছোট ছোট জায়গা। জাতীয়তাবাদীরা মিডিয়া খুললেও তাদেরই চাকরিতে প্রাধান্য থাকে।
পাঠক মন্তব্য
It is a very good article. People should know how their thought processes are being manipulated to think certain way. How cultural organizations to media outlets are controlled. From Udichi to Bichitra , they took control. Let me be clear, you can not be in any leadership position of a cultural organization , if you decide to have an event celebrating poet Forrookh Ahmed. Mohammad Ali Jinnah had eaten pork , drank alcohol but when it was for the interest oh the minority Muslims , he fought for Muslims right even though he never believed in breaking up India. Shafique Rahman's Father Saidur Rahman was secular professor at Eden college. Shafique Rahman always was secular but never did anything to be considered against the interest of Muslim people. Thank you . It is a thoughtful article.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন