মোকাররম হোসেন
কয়েকটা ঘটনার দিকে নজর দেন ---
১। ভারতে স্থানীয় ভাষার সংখ্যা কত? কয়েক 'শ তো হবেই। এক এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আরেক এলাকার মানুষের গায়ের রং মিল নাই। ৩৩ কোটি দেবদেবীর দেশ, নামে হিন্দু ধর্ম প্রধান হলেও ধর্ম-পালনেও নেই কোন একক নিয়মের বালাই । হিন্দি রাষ্ট্রীয় ভাষা হলেও নয় কোন এলাকার প্রধান ভাষা। ভিনদেশী বেনিয়াদের ভাষা ইংরেজিই ওদের প্রধান ভাষা। এতো ভাষা, বর্ণ, চমড়া, ধর্ম, মতপার্থক্যের পরেও শুধু মাত্র 'মেকী হিন্দুবাদ' আর ' অখণ্ড ভারত মাতা'র জিগির তুলেই নিজেদেরকে 'সুপার পাউয়ার' হওয়ার স্বপ্ন দেখছে ।
২। ইউরোপীয় ইউনিয়নের 'ওপেন সিক্রেট' থিম হলো 'আমরা সবাই খৃষ্টান'। ইউনিয়নের ৩০ টা দেশে কম করে হলেও ৫০ টা ভাষার সমাবেশ। সবার ইতিহাস আলাদা। ক্যাথোলিক, প্রটেস্টন্ট ছাড়াও খৃষ্টবাদের নানা ফেরকা শিয়া সুন্নিকেও হার মানাবে। ধর্ম এক হলেও সেটা নিয়ে গোঁড়ামি আর মত পার্থক্য প্রকোট । জার্মানীতে মাত্র ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে আলাদা আলাদা দিনে ধর্মীয় ছুটি পালনের নজির দেখেছি । সাদা চামড়া আর ইউরোপের বাসিন্দা হওয়া স্বত্ত্বেও শুধু মাত্র ধর্ম ভিন্ন হওয়ার কারনেই তার্কির ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার চাঞ্চ শূন্য । এমনকি ধর্ম-কর্মে বিশ্বাস নাই যার, সেই আমার অধ্যাপকও বলেন , 'তার্কিরা অন্য ধর্মের, তারা ইউনিয়নে আসবে কেন ?'
৩। সারা দুনিয়া থেকে ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, ভাষার অভিবাসীদের নিয়ে জড়ো করে ইউনাইটেড ষ্টেস অফ আমেরিকা সুপার পাউয়ার।
৪। ভাবতাম উদিয়মান চীনে বুঝি সবাই একই ভাষায় আর ধর্মের ! কিসের কি! এবার দীর্ঘ সময় থাকার ফলে বুঝলাম, জানলাম, কম করে হলেও চীনে নাকি তিন হাজার ভাষা চালু আছে । এক এলাকার মানুষের সাথে আরেক এলাকার কোন মিলই নাই। অর্থনৈতিক চিত্রের পার্থক্যও আকাশ-পাতাল। মিল নেই খাওয়া দাওয়া, লোকাচার কোন কিছুরই । ক্যান্টনিসরা বুঝে না ম্যান্ডারিন। ম্যান্ডারিন ভাষীরা বুঝে না ক্যান্টনিস। তার পরেও কমিউনিজমের ধুয়া তুলে মাত্র ৭০ বছরে অর্থনৈতিক সুপার পাঊয়ার হয়ে গেলো চীন।
৫। মাত্র ২১ হাজার বর্গমাইলের জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলও গড়ে উঠেছে এক 'উম্মাহ'র উপর। দুনিয়া কত দেশ থেকে কত ভাষার জায়নবাদীরাই না জড়ো হয়েছে এই মৌলবাদী রাষ্ট্রে তাঁর ইয়াত্তা নাই। কেউ কাউকে আগে চিনিত না, ভাষাও বুঝতো না। তার পরেও শুধু মাত্র একটি 'উম্মাহ' কেন্দ্রিক ধারনা থেকেই গড়ে তুলেছে ইসরাইল নামক আধুনিক জারজ রাষ্ট্র !
সবাই বুঝে । সবাই নিজ নিজ ভাষা, বর্ণ, লোকাচার, ভেদাভেদ ভুলে যায় । সবাই জড়ো হয় একটা 'থিমে' । ভুলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী 'উম্মাহ' । বুঝে না শুধু মুসলমানরা ! দুনিয়ার শত শত বছরে একাধিক 'উম্মাহ'কেন্দ্রিক সুপার পাউয়ার তৈরি করেছে যারা তারাই আজ শতধাবিভক্ত । ভাষাকেন্দ্রিক জাহেলিয়াত, অজ্ঞতা, গোয়ার্তুমি, পরাজিত মানসিকতা আর শাসকদের ক্ষমতার লোভে 'উম্মাহ' কথাটাই যেন একটি 'অকেজো', 'সেকেলে' আইডিয়া তাদের কাছে। ওরা দেখে না ইউরোপিয় ইউনিয়ন। ওরা বুঝে ভারতকে অখণ্ড রাখার মেকানিইজম। বুঝে না চীনের সুপার পাউয়ার হওয়ার মুল শক্তি !
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন