মুহসিন আবদুল্লাহ
সেদিন একটা বিয়েতে গেলাম। মসজিদে আকদ হলো। বিয়ে পড়ানোর আগে ঈমাম সাহেব তার খুতবা দেয়ার সময় মেয়ের বাবা উপস্থিত আছেন কিনা খুঁজে নিলেন। তারপর সেই হাদিসের উল্লেখ করলেনঃ পিতার অমতে মেয়ের বিয়ে হলে সে বিয়ে বাতিল। (যদিও এর প্রয়োগ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ আছে। হানাফি আলেমদের মতে, এটা শুধু নাবালিকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।)
ঈমাম সাহেব বেশ সময় নিয়ে খুতবা দিলেন। কিন্তু একবারও জানতে চাইলেন না যে, এই বিয়েতে মেয়ের সম্মতি আছে কিনা? তিনি তার খুতবায় একথার উল্লেখও করলেন না যে, মেয়েরও সম্মতি ছাড়া কোন বিয়ে হতে পারে না। সেটাও বাতিল বলে গণ্য হবে। অথচ সেই বিষয়েও হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া আছে।
আরো অনেক বিয়েতে উপস্থিত থেকেছি। কোথাও ইমামদেরকে এই বিষয়ে জোর দিয়ে বলতে শুনিনি যে, মেয়ের অমতে বিয়ে দেয়া যাবে না। সবসময়ই তারা এটাকে এড়িয়ে যান। আলোচনার প্রয়োজন মনে করেন না। তারা হয়তো মনে করেন- এতে মেয়েরা লাই পেয়ে যাবে!! মেয়ে মানুষকে নাকি বেশি লাই দিতে নাই!!!
মেয়ের বাপ উপস্থিত, তার মানে তিনি রাজী এবং আগ্রহীও। বোঝাই যায়। কিন্তু মেয়ে কি স্বতস্ফূর্তভাবে রাজী হয়েছে? নাকি তাকে বাধ্য করা হয়েছে? ইমামের কি বিয়ের আগে এটাও নিশ্চিত হওয়া উচিত না? বাপ মায়ের পছন্দের পাত্রের সাথে জোর করে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ঘটনা তো এই সমাজে বিরল নয়। তবু কেন ধর্মীয় নেতাদের এই উদাসিনতা?
মেয়ের পছন্দ অপছন্দকে উপেক্ষা করে, তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে বিয়ে দিলে ভবিষ্যতে পরকীয়ার রাস্তা খুলে যায়। তাছাড়া সে বিয়েই বৈধ হবে না। একটা বিয়ের বৈধতার সব শর্ত পূরণ হচ্ছে কিনা তা কি ইমাম সাহেব জেনে নিচ্ছেন? নিচ্ছেন না। অন্যসব খবর হয়তো নিচ্ছেন, শুধু মেয়ের মতামতটাই সবসময় উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। পরকীয়াসহ পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার পেছনে এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারণ।
আমি মনে করি, একটা মেয়ের অসম্মতিতে কোথাও বিয়ে দেয়ার চেয়ে তার অবিবাহিত থাকাও ভালো।
একজন মেয়ের অমতে, তার অপছন্দের জায়গায় বিয়ে দেয়া যে কতটা ভয়ংকর ব্যাপার, আমি যখন নিজেকে একটা মেয়ের জায়গায় রেখে চিন্তা করি- ভয়ে আতকে উঠি।
একটা মেয়ে, সে যতই শিক্ষিত আর মডার্ন হোক, নিজের অজান্তেই হাজব্যান্ডকে সুপেরিওর হিসেবে মেনে নেয়। সংসারের অথরিটি হিসেবে মেনে নেয়।
যাকে সে পছন্দ করেনা, যাকে তার ভালো লাগেনা, এমন একজনের সব আদেশ নিষেধ মেনে চলা, এমন একজনের সাথে কথা বলা, এমন একজনকে সার্ভ করা কীভাবে সম্ভব?
সামাজিক পারিবারিক চাপে বাধ্য হয়ে বিয়ে করা, মানে কি আবেগ অনুভূতিহীন শারীরিক সম্পর্কের চুক্তি মাত্র? নারীবাদীরা এটাকে ধর্ষণের সমতুল্য মনে করে। আমি অতটা বলবো না, কিন্তু এটা যে একটা ভয়ংকর ব্যাপার তা বলতে আমার আপত্তি নাই। একজন নারীর জন্য এটা কত বড় মানসিক আঘাত, আমাদের পক্ষে বোধহয় তা কল্পনা করা সম্ভব না।
আমাদের নবী (সাঃ) কতটা আধুনিক চিন্তার মানুষ ছিলেন সেটা ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। দেড় হাজার বছর আগে তিনি যে রকম চিন্তা করে গেছেন, যে রকম আচরণ দেখিয়ে গেছেন, আজকের আধুনিক যুগে আধুনিক দাবিদার পুরুষরাও সেরকম উদার চিন্তা করতে পারেন না।
ইসলামবার্তা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন