আমান আব্দুহু
অনেক দিন আগের কথা। তখন বাবুর দল এবং চাকরের দল এক জায়গায় থাকতো। বাবুরা বাবুগিরি করতো। চাকররা চাকরগিরি করতো। কিন্তু এক এলাকায় থাকার কারণে মাঝে মাঝে ঝামেলা হতো। চাকরের দল পড়ালেখা করতে চাইলে বাবুদের সাথে স্কুলে যেতে হতো। তখন তারা বলতো, চাকরদের আবার পড়ালেখা কিসের? চাকররা গরু খেতে গেলে বাবুদের উঠান নোংরা হতো। অন্যদিকে বাবুর দলের উঁচু কাজকারবার দেখেও চাকরদের মন খারাপ হতো। তাদেরও ইচ্ছা হতো।
এইরকম নানা ব্যাপার স্যাপার।
তখন সবাই মিলে সুন্দর একটা বুদ্ধি বের করলো। বাবুদের জন্য আলাদা এবং চাকরদের জন্য আলাদা এলাকা বরাদ্দ হবে। বাবুদের এলাকার নাম বারিধারা। চাকরদের এলাকার নাম আগারগাঁও বস্তি।
তারপর থেকে সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতেছে।
বারিধারার অর্থনীতি চালু রাখতে বস্তি থেকে সম্ভবপর সকল অবদান রাখা হয়। বস্তির লোকজন গিয়ে গিয়ে বারিধারার বাসিন্দাদের সেবা দিয়ে আসে। বস্তির সর্দারণী তাদের জন্য নিজে রেঁধে দিয়ে আসে। আলুটা মুলোটা ইলিশটা জামদানিটা পাঠায়। আবার বারিধারা থেকে কদাচিত কেউ চাকরদের অবস্থা দেখতে আসলে তখনও সে দ্রুত রান্নাবাটির আয়োজনে বসে যায়। আতিথেয়তার কোন ত্রুটি আছে এ কথা শত্রুও বলতে পারবে না।
বারিধারার লোকজন নাচাগানা করে, বস্তির লোকজন হাঁ করে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তা গিলতে থাকে।
সুতরাং বারিধারার বড়বাবুদের একজন যখন দয়া করে বস্তিতে বেড়াতে আসে তখন বস্তিবাসী আনন্দে কৃতজ্ঞতায় আটখানা হয়ে যায়। তারা হুলুস্থুল রান্নাবান্না শুরু করে দেয়। কোন পুণ্যির ফলে বাবুরা তাদেরকে এমন সুদৃষ্টি দিয়ে দেখেন তা তারা ভেবেই আকুল হয়। এমতাবস্থায় তারা বেড়াতে আসা বাবুকে একটা উঁচু চেয়ারে বসিয়ে তার পায়ের কাছে মাটিতে বসে নির্মল ও সুখী আনন্দে হাস্যোজ্জ্বল হয়। তারা নিজেদের দুই হাঁটুকে 'দ' এর মতো ভাঁজ করে দুই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে তমিজের সহিত নরম হয়ে বাবুর চারপাশ ঘিরে বসে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
বস্তিবাসী গরীব হতে পারে কিন্তু তারা অকৃতজ্ঞ নয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন