একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের বর্ষপূর্তিতে বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশের আশপাশে নারীদের হয়রানির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং টক শো’র পরিচিত মুখ ড. আসিফ নজরুল।
শুক্রবার সকালে আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পেইজে লিখেন:
‘৭ মার্চের জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একজন কিশোরীর উপর। আরো কিছু মেয়েও লাঞ্ছিত হয়েছিল এদিন।
গভীর মনোবেদনা নিয়ে আমি তাদের মনোজগত বোঝার চেষ্টা করেছি। তারা কি মনে করে আওয়ামী লীগ করলে, জয় বাংলা শ্লোগান দিলে যা ইচ্ছে করা যায় এদেশে এখন? হয়তো তাই । হয়তো তারা ভাবে তাদের জন্য সাতখুন মাফ এদেশে এখন।
জয় বাংলা ছিল একাত্তরের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের অহংকার। এ শ্লোগানকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এভাবে অবমাননা করছে এযুগের একশ্রেণীর জয় বাংলা শ্লোগানধারী।
ধিক্কার এদেরকে।’
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ারর্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের স্মরণে বুধবার একই ময়দানে জনসভা করে আওয়ামী লীগ। আর এজন্য আশপাশের বিভিন্ন সড়কে যান চালাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। এ কারণে হেঁটে চলতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। আর চলার পথে জনসভায় আসা নেতা-কর্মীদের হাতে বেশ কয়েকজন নারী হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদের মধ্যে ভিকারুননিসার ছাত্রী অদিতি বৈরাগী ফেসবুকে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে যায়। অদিতি জানান, বাংলামোটর এলাকায় সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে যাওয়া একটি মিছিল থেকে তাকে হয়রানি করা হয়েছে। তাকে থাপ্পরও দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় মানসিকভাবে ভয়াবহ বিপর্যস্ত জানিয়ে অদিতি এমনও লিখেন ‘আমি এই শুয়রদের দেশে থাকব না।’
অদিতির পাশাপাশি ইশরাতুল শোভা, আফরিন আসাদ মেঘলাসহ আরও বেশ কয়েকজন তরুণীও ফেসবুকে একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন।
একজন লিখেছেন ‘আল্লাহ কেন মেয়েদের দুইটা হাত দিল? দুইটা হাত দিয়ে এতগুলো হাত থেকে বুক, পেট বাঁচাব, ওড়না ধরে রাখব নাকি তাদের হাতগুলো সরাব?’
অন্য একজন লিখেন, ‘হল থেকে বের হয়ে কোনও রিকশা পাইনি। কেউ শাহবাগ যাবে না। হেঁটে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসতে হয়েছে। আর পুরোটা রাস্তাজুড়ে ৭ মার্চ পালন করা দেশভক্ত সোনার ছেলেরা একা মেয়ে পেয়ে ইচ্ছামতো টিজ করছে। নোংরা কথা থেকে শুরু করে যেভাবে পারছে টিজ করছে।’
এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নড়েচড়ে বসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে বিচার করা হবে।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই ঘটনার দায় দলের ওপর নিতে নারাজ। তিনি জানান, জনসভা এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটেনি, যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তা সবই বাইরে। এর দায় দল নেবে না। তবে সরকারের ওপর এর দায় বর্তায় বলে মনে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন