মোকাররম হোসেন
চলতি পথের কয়েকটি ঘটনা বলি---
১। বৃটেনে জার্মানীর তুলনায় আরব মুসলিম সংখ্যা অনেক বেশী । গত তিন বছরে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় আরব (মূলত উপসাগরীয়) জাতি ভাইদের সাথে মোলাকাত হয়েছে প্রচুর । বেশীর ভাগই ছাত্রছাত্রী। কী ছেলে, কী মেয়ে, কী যুবক, কী যুবতী ২০-৩০ বছর বয়সে এদের ৫০% এর শরীর অস্বাভাবিক মোটা । কারন আর কিছু না। খায় আর খায় । এ যেন এক 'খাদক' প্রজন্ম !
২। কিছুদিন আগে মেয়েকে নিয়ে সপরিবারে শহরে একটা মিউজিয়ামে বেড়াতে যাওয়া । পাশে এক লেবাননী রেস্টুরেন্টে দুপুরের খেতে বসলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি এক আরব মা তার দুই শিশু ( বড়টার বয়স ৪ বছরের বেশী হবে না ) খাওয়ার অর্ডার দিচ্ছেন । পরিবারকে বললাম, দেখো, ও কিন্তু একাধিক খাওয়া অর্ডার দিবে। হলোও তাই। আমরা দেখলাম, সেই নারী একে একে তিনটা ভিন্ন ভিন্ন ফুল আইটেমের লাঞ্চ অর্ডার দিলো । স্ত্রীকে বললাম, আমরা তিনজনে ( ৯ বছরে মেয়েসহ) দুটা লাঞ্চ খাচ্ছি, সে কিন্তু একাই তিনটা। আমরা চেটে পুটে সব খেলাম। ও কিন্তু সব খাবে না। খাওয়া সম্ভবও না । ওসব নিয়েছে চোখের সাধ মেটাতে, আর নিজের 'ঐতিহ্য' দেখাতে । হালকা কিছু খেলো, বাকি গুলো পুরো ফেলে রেখে চলে গেল।
৩ । গত দুই বছর আগে আল-জারিয়া একটা গবেষণা জরিপ প্রকাশ করেছিলো । সেখানে দেখানো হয়েছিলো বেশী খাওয়া নষ্ট করে দুনিয়ার এমন সেরা দশ নগরীর সাতটিই উপসাগরীয় মুসলিম দেশের। এর মধ্যে নবীর (সা) মক্কা মদিনাও আছে। আরো মজার ব্যাপার ঐ গবেষনা মতে, এই খাদ্য নষ্টের প্রতিযোগিতাটা আরো জোশের সাথে চলে পবিত্র রমজান মাসে । সংযমের মুসলিম ষ্টাইল আর কি ! সেদিন নিউজটা শেয়ার করে চট্রগ্রামের ওয়াজেন মাওলানা আ ফ ম খালিদ হোসেন আফসোস করে লিখেছেন, 'এভাবে আল্লাহর অমূল্য নেয়ামতের অপচয় করলে তিনি কখন জানি ওদের উপর দুর্ভোগ চাপিয়ে দেন আর নেয়ামত কেড়ে নেন'
৪। কয়েকদিন আগে আমাদের লোকাল মসজিদে ফান্ড রেইজের প্রগ্রাম হয়েছে । সময় অভাবে এসবে যেতে পারি না। পরিবার যায় । তারা আসার সময় টাকার বিনিয়মে অতি ফ্যাট যুক্ত কিছু খাওয়ার নিয়ে এসেছে। বললাম, এগুলো কে নিতে বলেছে। টাকাটা এমনি দিয়ে আসতা। দুনিয়ায় ফান্ড রেইজ করার জন্য পশ্চিমারা নানা আয়োজন করে। পুরনো জিনিস বিক্রি করে, হাতের কাজ বিক্রি করে, সাস্ককৃতিক প্রতিযোগীতা করে, বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে, কেউ তার সেরা চিত্রকর্মটি বিক্রি করে, কেউ জাদু দেখায়, কেই তার শারীরিক কসরত দেখায়, কোথাও সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতা হয়, ঘোড়া দৌড় হয়। কত কিছুই হয় । কিন্তু মুসলিমদের 'খাওয়া প্রতিযোগিতা' ছাড়া কিছু দেখছো?
৫। এই 'রোগ'টা শুধু উপসাগরীয় দেশেই সীমাবদ্ধ নয় । কিছুদিন আগে দেখলাম পশ্চিমা দুনিয়ায় নামকরা মুসলিম সাহায্য সংস্থা 'মুসলিম এইড'র (Muslim Aid) একটা নিউজ। তারা ফান্ড রেইজ করার জন্য কি করেছে? কয়েকশ কেজি না টনের একটা 'কাবাব' বা 'কেক' বানিয়ে দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিছে। তারপর সবাইকে তা খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছে। বেশ গর্বের সাথে প্রচার করেছে ওটা। মানে খাও আর টাকা দাও । অথচ মুসলিম এইডের মেধা বা আইডিয়ার কমতি ছিলো না, যা দিয়ে ফাইন্ড রেইজ করা যেতো। অতো কষ্ট করার কি আছে । খাও আর দাও । 'ঐতিহ্য' বলে একটা কথা আছে না !
৬। সবার শেষের এই নিউজটা দিয়েই লেখাটা শেষ করি। কয়েকদিন আগে মুসলিম দুনিয়ার একটি বড় সংস্থা Muslim World League এর একটি খবর। তারা জাপানে আগামী অলিম্পিক ২০২০ 'হালাল' গোস্ত সাপ্লাই দিবে। এই সংস্থাটি একসময় সারা দুনিয়ায় মুসলিম, অমুসলিম সবার মাঝে দাওয়াহ, তাবলীগের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতো। বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের জন্য ইসলামি বই, পুস্তক প্রচার করতো। নানা সমাজ কল্যাণমুলক কাজ করতো। এরা এখন 'গোস্তের সাপ্লাইয়ার' ! কি অধঃপতন ! ভাবছি, কিছু না। সেই 'ঐতিহ্যে ই ফিরে যাওয়া ! 'খাদক' উম্মাহ বলে কথা !
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন