তসলিমা নাসরিন। নারীবাদী-প্রতিবাদী হিসেবেই সবাই তাকে চেনে। সোশ্যাল সাইট কিংবা রিয়েল লাইফ; সর্বত্রই তার প্রতিবাদী বিচরণ। সেই তসলিমার লেখায় এবার পাওয়া গেল ভিন্ন স্বাদ। কোথাও যেন নস্টালজিক হয়ে গেছেন বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত এই নারীবাদী লেখিকা। নিজের ভেরফায়েড ফেসবুক পেইজে কিছু ঘটনার স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে তিনি লিখলেন ভাববাদ কিংবা বস্তুবাদী জীবনের কঠিন বাস্তবতা- 'সব ফেলে চলে যেতে হবে একদিন'।
তসলিমা লিখেছেন, 'আনন্দ পুরস্কার দুবার পেয়েছিলাম। ১৯৯২ সালে নির্বাচিত কলাম আর ২০০০ সালে আমার মেয়েবেলা বইয়ের জন্য। দুবারের টাকা আর যে লোকই করুক, আমার ভোগ করা হয়নি। আর সোনার লেখাসহ দুটো রূপোর থালা? চুরি হয়ে গেছে। আর ওই রূপোর দুটো দণ্ডতে প্যাঁচানো তসরের কাপড়ে লেখা অসাধারণ সেই আনন্দ অভিনন্দন বার্তা? ওটির একটি আছে শুধু, আরেকটি নেই। কোথায়? চুরি হয়ে গেছে। কলকাতার আর দিল্লির বাসভবন থেকেই। ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্য যত মেয়েকে রেখেছি, পোষা বেড়ালকে খাওয়াবে বলে যাকেই রেখে দেশের বাইরে গেছি, তারাই আমার টাকা পয়সা হীরে সোনা রুপো বা দামি যা কিছু ছিল সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে।'
'ইউরোপে যে বাড়িতে ছিলাম, ২৪ বছর আগে যেভাবে রেখেছিলাম জিনিসপত্র, সেভাবেই পড়ে আছে সব, কিছুই খোয়া যায়নি। কিন্তু ভারত বর্ষে সব শখের জিনিস, স্মৃতির জিনিস দিয়ে ঘর সাজিয়ে এখন দেখি সব হারিয়ে ফুরিয়ে বসে আছি। ঢাকার বাড়িরও একই অবস্থা। নেই কিছু। পুরোনো কত ছোট ছোট জিনিস কত কিছু মনে করিয়ে দেয়। এখন তো সিন্দুক খুলে বসার বয়স। একটি একটি করে হাতে নেবো নেপথলিনের গন্ধ মাখা সেইসব পুরোনো চিঠিপত্র,পুরোনো ফটো...।'
'দুদিন আগে আনন্দ পুরস্কার অনুষ্ঠান হলো। ভাবছিলাম এখনও কি সোনায় লেখা রূপোর থালা দেয় ওরা? থালার ওপর জুঁই ফুলের মালা? থালার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে কী লাভ! সব ফেলে চলেই তো যেতে হবে একদিন। এইসব বস্তুর কী মূল্য! যতদিন বাঁচি, কেবল যা দেখিনি তা দেখবো। পেছনে তো পড়েই থাকে অর্থ কড়ি, স্বীকৃতি।'
'লুটপাট কারা করেছে, অনুমান করেছি। কিন্তু কাউকে কোনও প্রশ্ন করিনি। কারো কাছ থেকে কিছু ফেরত আনতে যাইনি। ওগুলো বিক্রি করে দিয়েছে নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই খুব টাকার দরকার ওদের। এই দুনিয়ায় কারো বেশী থাকবে, কারো কম থাকবে, তা কেন ওরা হতে দেবে! হয়তো ঠিকই করেছে।'
পাঠক মন্তব্য
'"ইউরোপে যে বাড়িতে ছিলাম, ২৪ বছর আগে যেভাবে রেখেছিলাম জিনিসপত্র, সেভাবেই পড়ে আছে সব, কিছুই খোয়া যায়নি। কিন্তু ভারত বর্ষে সব শখের জিনিস, স্মৃতির জিনিস দিয়ে ঘর সাজিয়ে এখন দেখি সব হারিয়ে ফুরিয়ে বসে আছি। ঢাকার বাড়িরও একই অবস্থা। " It is sad. It is one of the reason Trump won election and Europe has similar situation.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন