ভ্রষ্ট বামেরা নষ্ট হলে তাদের আর নীতি নৈতিকতা বলতে কিছুই থাকে না। যৌবনে কৃচ্ছ্বতা সাধনে ক্লান্ত বামেরা টাকার জন্য সব কিছুই করতে পারে। যেমনটি আমরা নারীদেহ লোলুপ হায়েনা পাকসেনাদের নারী সরবরাহকারী রাজাকার আলবদরদের দেখেছি ১৯৭১ সালে। পাকসেনাদের লালসার যোগান সময়মত দিতে না পেরে অনেকে পরে নিজেদের মা-বোনদের দিয়ে আসতো পাকিদের ক্যাম্পে, সামান্য টাকার লোভে। ধর্মের দোহাই দিয়ে মিথ্যাচার তো তাদের কাছে নস্যি মাত্র। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় আবারও এই বাংলার কুখ্যাত রাজাকার, তাদের আওলাদ ও আর তাদের দোসরদের খুব সক্রিয় মনে হচ্ছে। মাদক-বিরোধী আন্দোলনকে বিতর্কিত করারা চেষ্টা, ঈদের পরে সারা দেশজুড়ে কোটা-বিরোধী আন্দোলন শুরুর হুমকি, অনেকে এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করলেও আসলে কী এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা! সন্দেহ হয় মনে, অভিজ্ঞ অনেকের।
খবরে দেখলাম, আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র আটককারী পুলিশ ইন্সপেক্টর হেলালকে গত রোববার ফেনীতে হত্যা করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে মুন্সীগঞ্জে প্রগতিশীল কবি, প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভিনের ছেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী এবং পেশায় একজন ব্যাংকার সুমন জাহিদের ধড় মাথা আলাদা করা লাশ উদ্ধার হয়েছে ঢাকায়। বাড্ডায় হত্যা করা হলো আওয়ামী লীগ নেতাকে। অন্যদিকে বগুড়ায় আবারও (২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বরও ভেঙ্গেছিল) মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘বিজয়’ ঈদের দিন শনিবার রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা এটি ভাঙচুর করেছে।
বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় শিল্পী আমিনুল করিম দুলাল নির্মিত ভাস্কর্যটি ১৯৯৬ সালে স্থাপন করেছিলো বগুড়া পৌরসভা। যুদ্ধ শেষে অস্ত্র কাঁধে হাতে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মুক্তিযুদ্ধের প্রতিকৃতি এটি। ২০০২ সালে বিএনপির শাসনামলে শহর উন্নয়নের সময় ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার পর মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির মুখে ভাস্কর্যটি বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের বনানী মোড়ে পুনস্থাপিত হয়। গত রোববার দুপুরে বনানীতে গিয়ে দেখা যায়,ভাস্কর্যের ডান হাতটি ভাঙা এবং বেদীর ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিই ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করেছে।
পোড়খাওয়া মানুষেরা বলছেন, এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। কিছুদিন আগে মওলানা আকরাম খাঁর বংশধর শাহেদ আনাম খানকে ডেইলি স্টারের নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কাদের নিরাপত্তার জন্য তা স্পষ্ট নয়। সে ১৯৭১ সালে পাকি বাহিনীর হয়ে বাঙালি নিধন পর্বে ভূমিকা রেখেছিল। নরঘাতক হানাদার খাদিম হোসেন রাজার এডিসি ছিলেন শাহেদ আনাম খান। পাকসেনার ক্যাপ্টেন হয়ে সে যা করেছে, তার বিবরণ অপরাধ আদালত পাওয়া যাবে। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে শাহেদ আনাম খান পাকিস্তান চলে যায় আবার ৭৪সালে ফিরে আসে। এখন কিসের আর কাদের নিরাপত্তা বিশ্লেষণ করে শাহেদ আনাম খান ডেইলি স্টারে বসে? ওরা তো কখনোই বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি, নেবেও না।
এবার দেখি স্বাধীনতার পর পরই যখন মানবতা বিরোধীদের বিচার শুরু করেন বঙ্গবন্ধু তখন কী সমস্যার মোকাবিলা করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে নির্বাচনের প্রাক্কালে দালাল ও স্বাধীনতা বিরোধীদের সমর্থন পেতে ন্যাপ এবং আতাউর রহমানের জাতীয় লীগসহ আওয়ামী বিরোধী পিকিংপন্থী জোট নির্বাচনের আগেই দালালদের মুক্তি দাবী করে। এ সময় তারা হুমকি দেন যে, ১৯৭২ সালের ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে দালাল আইন বাতিল না করলে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন। শুধু এখানেই ক্ষান্ত হননি, একের পর এক তিনি কর্মসূচি দিয়ে গিয়েছিলেন এই বিচার বন্ধ করবার জন্য। এই বিচারকে তারা অভিহিত করেছিলেন প্রহসন হিসেবে। উল্লেখ্য যে এই দালাল আইনে তখন ন্যাপের অনেক নেতা কর্মী আটক ছিল।
এছাড়াও বুদ্ধিজীবী যেমন নির্মল সেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের পিতা আবুল মনসুর আহমদ এই দালাল আইনের বিরোধিতা করেছিলেন দেশকে বিভক্তিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এই কথাটা বলে। সে সময়ে তারা এই নিয়ে একের পর এক পত্রিকায় কলাম লিখতে থাকেন আর বিচার বন্ধে চাপ দিতে থাকেন। আবুল মনসুর তার লেখা বই ‘আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর’ গ্রন্থেও এই বিচার নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। ১৯৭২ আইনে দালাল আইনে দালালদের বিচারের সরাসরি বিরোধিতা করে এই বিচারের পক্ষে তিনি যে ছিলেন না সেটা স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি রেফার করছি আবুল মনসুর আহমদের ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইটির ৬০৭ নাম্বার পৃষ্ঠা। যে অংশের শিরোনাম হচ্ছে ‘চাঁদে কলংক’। এই অংশটি যদি আমরা পাঠ করি তবে জানতে পারব যে আবুল মনসুর আহমদ খুবই স্পষ্টভাবে এই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচারের পক্ষে ছিলেন না। ইনফ্যাক্ট এই আইন করে বিচার করাকে তিনিই অভিহিত করেছেন সর্বগ্রাসী ও মারাত্মক হিসেবে। দালাল আইনে বিচারটাই যেখানে তিনিই চাননি সেখানে তিনি আবার এই আইনের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন দালাল আইনে ফাঁক ছিল অপপ্রয়োগের।
আবার গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন যখন চরমে, সারা দেশের মানুষ এতটাই উজ্জীবিত যে, হয়তো আর কয়েকদিন গেলে সাধারণ মানুষ গণপিটুনি দিয়েই মানবতা বিরোধীদের গলা টিপে মেরে ফেলবে। গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক লাকীর শ্লোগান সারা দেশে পৌঁছে গেছে তখন বামপন্থী নামে খ্যাত সম্পাদক মতিউর রহমানের পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলো লাকীকে ‘বেশ্যা’ বানিয়ে আন্দোলনকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার প্রাণান্ত চেষ্টায় অনেকটাই সফল হয়েছিল।
বাজারে জোর গুঞ্জন আছে যে, এক কালের কমরেড ও সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক আর হালের দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সম্পাদক পদ অপসৃয়মান হয়ে আসার ক্ষণ গণনা চলছে। শূন্যপদে অভিষিক্ত যিনি হবেন বাতাসে ভাসে তার নাম। সম্পাদক পদের বয়সসীমা নেই যদিও কাগজপত্রে, তথাপিও। অন্য একটি সূত্র দাবী করেছে যে, মতিউর রহমান নাকি সাবেক ভোরের কাগজ সাংবাদিকদের নিয়ে ঢাকা ক্লাবে একটা পার্টি দিয়েছেন। যেখানে ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তও ছিলেন। শ্যামল দত্ত একসময় ভোরের কাগজের কূটনৈতিক প্রতিবেদক ছিলেন, যখন মতিউর রহমান ছিলেন, পত্রিকার সম্পাদক। সূত্রে দাবী করা হয়েছে যে, মতিউর রহমান আবার ভোরের কাগজে ফিরছেন। তিনি ভোরের কাগজে থাকবেন পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য হিসাবে। কারণ কী?
এসব ঘটনায় মনে পড়ে যায়, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাস বিরোধী এক জনসভায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও শমসের মণ্ডল সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সে সময় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় যে, এই হত্যাকাণ্ডে বিচ্ছিন্নভাবে ভিন্ন মতাদর্শের চারটি পক্ষ জড়িত ছিল। এরা হচ্ছে- পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদের ক্ষুদ্র একাংশ, স্থানীয় বিএনপি এক নেতা, আর প্রশাসনে লুকিয়ে থাকে স্বাধীনতা বিরোধী কিছু পুলিশ কর্মী।এদের একাংশ সরবরাহ করেছিল পেশাদার কিলার,আরেক দল দিয়েছিল অস্ত্র, আরেক গ্রুপ হত্যাকাণ্ডের পরে নিরাপদে পালিয়ে যাবার পথ করে রেখেছিল, আরেক দল মোটা টাকায় সভাস্থলে পুলিশ আসতে দেরি করিয়ে দিয়েছিল। এদের একে অপরের সঙ্গে পরিচিত নয়, যৌথ বৈঠকও হয়নি, কাজ সেরেছে তারা চিরকুট দিয়ে।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ঝন্টু জানায়, ঘটনার ১৪/১৫ দিন আগে চুয়াডাঙ্গা জেলার আঠারোখাদা গ্রামের একটি বাড়িতে একটি বৈঠক হয়, তাতে লাল্টু (মূল নেতা), যেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হবে সেই এলাকার মান্নান মোল্লাসহ কয়েকজন ছিলেন ওই বৈঠকে। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঝন্টু কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামে গিয়েছিলেন। সেখানে লাল্টু বাহিনীর দুই সদস্য তার হাতে একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। ওই চিঠিতে লেখা ছিল- ‘পত্রবাহকের সঙ্গে যাবেন এবং ছোট্ট একটা অপারেশন করে আসবেন।’
হত্যাকাণ্ডের পর পরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হস্তক্ষেপে সেই ঘটনায় উপস্থিত এক জাসদ নেতা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে, যিনি পরে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন,তাৎক্ষনিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন যে, অস্ত্র যোগাড়ও হয়েছিল চিরকুট দিয়ে, কার বক্তৃতার পরে আর কাকে হত্যা করা হবে তাও লেখা ছিল ভিন্ন চিরকুটে। আরেক চিরকুটের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে থানার পুলিশকে সভাস্থলে দেরিতে আসার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও মাইকিং হচ্ছিল কয়েকদিন আগে থেকেই। পুরোটাই ছিল সাজানো ছক। মানে দাঁড়ায় এটা যে, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন চিরকুট দিয়েই ঘটানো হয়েছিল একটি বড় হত্যাকাণ্ড, মুক্তিযুদ্ধের একজন বড় সংগঠককে হত্যা করা হয়েছিল। সেখানে ছিল বিরাট অঙ্কের টাকার খেলা। কাজী আরেফ আহম্মেদ ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সেই সময়ে অন্যতম ঘনিষ্ঠ মানুষ। তাই শেখ হাসিনাকে দুর্বল করতেই এই ঘটনা ঘটান হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই চিরকুটের বিকল্প এখন ইন্টারনেট, মেইল, এসএমএস,এমএমএস, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইত্যাদিতে হতে পারে না? যেমনটি হয়েছিল গুলশানের হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডে!
জামায়াত ও তাদের সমমনা বিএনপির একটা বিরাট অংশ, আর তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের বর্তমান কথাবার্তা, আচরণ, কর্মকাণ্ড, টক শোতে তাদের পোলিশমারা কথাবার্তা যেন একটু বেসুরো গান মনে হচ্ছে। তাদের যুবরাজের কাছ থেকে ফিরে আসা বিএনপি’র মহাসচিবের বক্তব্য, সরকারের উন্নয়ন কাণ্ডের অধিকাংশ প্রকল্পের বাগড়া দেওয়া ডক্টর কামাল, বি. চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী, আ.স.ম আব্দুর রব, অলি আহাম্মেদদের নড়াচড়া আর সরকারি দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কাউয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাতের প্রাণান্ত চেষ্টা খুব সন্দেহজনক। এটা কী কোনো বড় ঝড়ের পূর্বাভাসের রিহারসেল! ভাবতে হবে, চোখকান খলা রাখতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
I give a quick look to keep my self informed of what is going on in Bangladesh . But if you keep publishing trash like this Mr. trash-editor , then i should stay away. i do not want get used to the smell nordoma. I do not know which nordoma you came from , may be awami nordoma or jamath nordoma? which one?.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন